পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭৩৪

দশ কোটি মুসলমানের মধ্যে চার কোটি মুসলমানকে হিন্দুস্তানে ফেলে আসা হলো। যারা এক জাতিতে বিশ্বাস করেন তারা কেমন করে চার কোটি মুসরমানকে হিন্দুস্তানে পেলে আসলেন? তাঁরা বে-ঈমানী করে চার কোটি মুসলমানকে হিন্দুস্তানে ফেলে এসেছেন।

 দুই জাতির ভিত্তিতে পাকিস্তান এসেছে, তা নয়। এর পিছনে আর একটি জিনিষ ছিল। সেটা হচ্ছে ভারতীয় মুসলমানের আর্থিক দুরবস্থা। এই আর্থিক দুরবস্থা হতে মুক্তি লাভের সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় আন্দোলন এসে পড়ে। চার কোটি মুসলমান ভারতে যুক্ত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। আমরা এক জাতি দাবী করতে পারি, পৃথক নির্বাচন দাবী করতে পারি যদি চার কোটি মুসলমানকে এখানে আনতে পারি। পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে যুক্ত নির্বাচন আছে, তারা তা মুসলমান বলে গর্ব অনুভব করে, তারা non-muslim হয়ে যায়নি। ইসলামের নামে জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এবং দুনিয়ার বহু মুসলমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং third grade, fourth grade জাতিতে পরিণত হয়েছে।

 আজ দুনিয়ার প্রত্যেক ইসলামী রাষ্ট্র 3rd grade, 4th grade রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। টার্কী, ইজিপ্ট, সিরিয়া, ইরান, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া সব ইসলামী রাষ্ট্রে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রচলিত। সে সমস্ত দেশের মুসলমানদের কথা চিন্তু করুন। পাকিস্তানে কথায় কথায় ইসলামের দেহাই দেওয়া হয়ে থাকে, কিন্তু মানুষের দুঃখের সীমা নাই। মানুষ খেতে পায় না, পরতে পায় না, গৃহহারা সর্বহারাথ-মিথ্যা bribery বেদম চলছে। ইসলাম তা নয়। প্রকৃত ইসলাম হ’ল যেখানে জুলুম থাকবে না, ঘুষ থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না, মানুষে মানুষে ভোদভেদ থাকবে নাথ- সকল মানুষে খেতে পাবে, পরতে পাবে, শিক্ষা পাবে, থাকবার বাসস্থান পাবে, রোগে ঔষধ পাবে। আমার নাম মুজিবর রহমান আমাকে কাজে দেখাতে হবে যে আমি মুসলমান এবং ইসলাম আমার ধর্ম।

 আজকে এই হাউসে ৭২ জন minority সদস্য আছে। স্যার, আমি জানতে চাই যে, যদি যুক্ত নির্বাচন প্রথা গ্রহণ করা না হয় তাহলে কি পাকিস্তানে একটি Assembly-তে চলবে? পাঁচটা Assembly করতে হবে। হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিলে যদি un-Islamic হয় তাহলে এই Assembly-তে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান এক সঙ্গে ভোট দেয় কেমন করে? স্যার আমরা হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিয়ে আপনাকে এই হাউসের স্পীকার করেছি, হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিয়ে Islamic Republic of Pakistan করেছি-আজ পর্যন্ত যত আইন পাশ করেছি সবই হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে ভোট দিয়ে করেছি- আমি জানতে চাই, এই সমস্তই কি ইসলাম বিরোধী হয়েছে? আমার দেশের লোক অশিক্ষিত হতে পারে কিন্তু মুর্খ নয়। বুঝেই জনসাধারণ আজ যুক্ত নির্বাচনের পথে সমর্থন জানাচ্ছে। আমি বলতে চাই, স্যার এই হাউসে আমরা বসে আছি-আমরা আইন পাশ করছি- আমরা debate করছি- হিন্দু-মুসলমান ভোট দিচ্ছি- খৃষ্টান ভোট দিচ্ছে-বৌদ্ধ ভোট দিচ্ছে- একত্রে আইন পাশ করছি। আমি আপনার মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি যে এই যে আইন সকল সম্প্রদায়ের লোক একসঙ্গে ভোট দিয়ে পাশ করলাম এটা কি Islamic আইন বল, না un-Islamic আইন হল? এই আইন সভায় যদি হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বসে, একত্রে ভোট দিয়ে আইন পাশ করতে পারি, জনসাধারণ কেন একসঙ্গে ভোট দিতে পারবে না- জনসাধারণ কোন অপরাধে তা করতে পারবে না? স্যার, আর একটা প্রশ্ন করতে চাই- যারা যুক্ত নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু করেছেন, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই- বিশেষ করে মুসলিম লীগ বন্ধুদের কাছে জানতে চাই যে, এই যে National Assembly-র নির্বাচন হল- পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হুকুম দিলেন নির্বাচন যুক্তভাবে হবে। পূর্ব বাংলার ৪০ জন হিন্দুমুসলমান মেম্বার আমরা যুক্তভাবে নির্বাচিত হয়েছি। সেটা কি জায়েজ, না না-জায়েজ কাজ হয়েছে? তখন যদি মৌলানা আতাহার আলী সাহেব ঘোষণা করতেন যে এটা ইসলাম, কোরান এবং হাদীসের বিরোধী কাজ- এতে আমি শরীক হব না। তাহলে বুঝতাম যে তাঁরা সত্যিকারের আদর্শ নিয়ে সংগ্রাম করছেন। আজকে মৌলানা আতাহার আলী ফরিদ আহম্মদ সাহেব সেই National Assembly-র মেম্বার। স্যারআমার দ্বিতীয় পয়েণ্ট হচ্ছে যে পৃথক নির্বাচন সমর্থকদের হিন্দু-মুসলমান একসাথে ভোট দিতে আপত্তি আছে, কিন্তু একসঙ্গে