পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭৫৪
শিরোনাম সূত্র তারিখ
নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন মওলানা ভাসানীর বক্তৃতা সম্মেলন কমিটি পুস্তিকা ২৫-২৬ জুলাই, ১৯৫৭

পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান হইতে আগত ভ্রাতা ও ভগ্নীগণ!

 আপনারা অনেক কষ্ট স্বীকার করিয়া নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে সমবেত হইয়াছেন। সম্মেলনকে সফল করিয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে আপনারা সকল প্রকার অসুবিধা অবনত মস্তকে গ্রহণ করিয়াছেন। আপনাদের সকলের প্রতি তাই আমার গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।

বন্ধুগণ!

 দশ বছর পূর্বে আমরা পাকিস্তান অর্জন করিয়াছি। সংগ্রামের দিনগুলি ছিল আমাদের স্বপ্নে ও কল্পনায় ভরপুর। আমরা পাকিস্তানে এক সোনার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করিতে চাহিয়াছিলাম। আমরা কল্পনা করিয়াছিলাম সুখী সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমরা স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম ত্যাগ ও সাধনার ঐশ্বর্য্যে মহিমান্বিত একটি জাগ্রত জাতি। সে জাতি বিশ্বে অধিকার করিবে এই গৌরবময় আসন।

 কিন্তু দশ বছরের স্বপ্ন আমাদের ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গিয়াছে। দেশবাসীর কল্পনার সৌধ আজ বিধ্বস্ত। অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত ও দিকভ্রান্ত জাতি আজ পথের সন্ধান চায়, সন্ধান চায় মুক্তির।

 সে পথ নির্দেশের পবিত্র দায়িত্ব আজ আপনাদের সকলের উপর। সুদূর উত্তর পশ্চিম সীমান্ত হইতে শুরু করিয়া চট্টগ্রামের কক্সবাজার পর্যন্ত আমাদের দেশের সকল মানুষ আপনাদের উপর সে মহান দায়িত্ব অর্পণ করিয়াছে। দেশের আহ্বানে আপনারা সাড়া দিয়াছেন। পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক জীবনধারাকে অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য আপনারা যে দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দিয়াছেন সেজন্য আবার আপনাদের সকলকে জানাই আমার আন্তরিক ধ্যনবাদ।

বন্ধুগণ!

 স্বাধীনতার মর্মকথা সকল দেশে ও সকল কালে প্রায় এক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের অবসান, আর্থিক দুর্গতির নিরসন এবং মানুষের সংস্কৃতি ও মননশীলতার উন্নতি ও ব্যাপ্তিই স্বাধীনতার প্রাণকথা। মানুষের জীবন হইতে এই বস্তু দুইটিকে বাদ দিলে মানুষে-পশুতে ব্যবধান তাকে না। তাই মানুষ তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রেরণায় যুগে যুগে আত্মহুতি দিয়াছে; নিজের জানমাল কোরবানী করিয়াছে। এমন একটি গুণে গুণান্বিত বলিয়াই বিশ্ব স্রষ্টা পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা মানুষকে বলিয়াছেন- আশরাফুল মখলুকাত। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।

 কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ সকল যুগেই নিজদের ভোগলালসা চরিতার্থ করার জন্য মানুষকে গোলাম বানাইয়া স্রষ্টার ‘আশরাফা’কে ‘আতরাফে’ পরিণত করিবার ষড়যন্ত্র করিয়াছে, কিন্তু এই অস্বাভাবিক বিভেদ মানুষ কোন কালেও মানিয়া লয় নাই। এ জন্যই যুগে যুগে মানুষ করিয়াছে বিদ্রোহ। দেশে দেশে স্বাধীনতা আন্দোল ও গণঅভ্যুত্থান সেই বিদ্রোহেরই অপর নাম।

 নিপীড়িত মানুষের ইজ্জত ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই তো সেদিন আমার রসুল আরব মরুভূমির বুকে আজীবন সংগ্রাম করিয়া গিয়াছেন তাঁহার সংগ্রাম ছিল জালেম কোরেশদের বিরুদ্ধে। আরবের মানুষকে কৃতদাসে পরিণত করিয়া কোরেশরা জাজিরাতুল আরবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও দুর্নীতির এক বিভীষিকা কায়েম করে।