পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭৬১
বৈদেশিক নীতি:
বন্ধুগণ!

 গভীর উদ্বেগের সহিত আমি লক্ষ্য করিতেছি যে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার মুসলিম লীগ সরকার মুসলিম লীগ সরকার কর্তৃক অনুসৃত সামরিক চুক্তিগুলিকে সমর্থন করিয়া আমাদের পাকিস্তানের আজাদী ও সার্বভৌমত্বের সামনে এক বিপন উপস্থিত করিয়াছে।

 মুসলিম লীগ সরকার আমেরিকা বৃটেন প্রভৃতির সাথে যেসব সামরিক চুক্তি অনুষ্ঠান করিয়াছেন, সেসব চুক্তি যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হানিকর, শুধু অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া আমি সে কথা বলিতেছি না। আমরা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা হইতে দেখিয়াছি যে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা সব সময় মুসলমানদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। ১৯শ’ শতাব্দীর শেষ ভাগ হইতে আজ পর্যন্ত আরব জাহানে বৃটিশ শাসকবর্গের কার্যকলাপ হইল একমাত্র প্রতিশ্রুতি ভংগ ও বিশ্বাসঘাতকতার কার্যকলাপ। পলাশীর যুদ্ধের সময় হইতে শুরু করিয়া সাম্প্রতিককালে পর্যন্ত আমাদের প্রতি বৃটিশ শাসকবর্গ যে ব্যবহার করিয়াছে তাহা হইল শুধু বঞ্চনা, শোষণ ও অত্যাচারের কাহিনী। পাকিস্তান কায়েম হওয়ার সময়েও কি বৃটিশ শাসকবর্গের ছলচাতুরীর জন্যই পাকিস্তান “বিকলাঙ্গ ও কীটদষ্ট” রাষ্ট্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করে নাই? আর জাহানের বক্ষে ছুরিকাঘাত করিয়া বৃটিশ ও আমেরিকার শাসকবর্গই কি ইসরাইল রাষ্ট্রের পত্তন করেন নাই?

 বলা হইয়া থাকে যে আমাদের দেশের আর্থিক উন্নয়নের জন্য আমেরিকার ডলার সাহায্য প্রয়োজন। শর্তহীন বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য গ্রহণে আমাদের কোন আপত্তি নাই। বরং সেরূপ সাহায্য আমরা চাই। শর্তহীন সাহায্যই বন্ধুত্বকে গাঢ় করিতে পারে। কিন্তু আমেরিকার শর্তাধীন ডলার সাহায্যে কোন দেশ উন্নতি করিয়াছে, এরূপ কোন দৃষ্টান্ত কেহ দেখাইতে পারেন কি? পক্ষান্তরে, আমরা দেখিয়াছি যে, শত শত কোটি ডলার সাহায্য সত্ত্বেও চিয়াং শাসিত চীনের আর্থিক অবস্থা অবনতির চূড়ান্ত সীমায় পৌছিয়ছিল। তুরস্ক, ইরাক প্রভৃতি দেশ বহুদিন হইতে ডলার সাহায্য পাইতেছে। অথচ আমেরিকার শাসকবর্গের মুখ হইতেই শোনা যায় যে, ঐ সব দেশের আর্থিক সংকট বাড়িতেছে বৈ কমিতেছে না। আমরাও ডলার সাহায্য পাইতেছি ১৯৫৪ সন হইতে। কিন্তু তবুও আমাদের দেশের আর্থিক সংকট দিন দিন গভীর হইতেছে এবং কোটি কোটি সাধারণ মানুষ আজও অনাহারে ও অর্ধহারে থাকিতে বাধ্য হইতেছে।

 ডলার সাহায্য দ্বারা কোন দেশের আর্থিক উন্নতি না হওয়ার প্রধান কারণ হইল যে, যেসব চুক্তি মারফত আমেরিকা ঐ সব সাহায্য দান করে সেসব চুক্তিতে এমন সব শর্ত জুড়িয়া দেওয়া হয় যাহাতে সাহায্যপ্রাপ্ত দেশের রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বাধীনতা বিনষ্ট হয়। এর প্রমাণস্বরূপ আমি পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির শর্তাবলীর কিছু উপস্থিত করিতেছি।

 ১৯৫৪ সনের প্রথম ভাগে ঐ সামরিক সাহায্য চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী আমার তারবার্তার জওয়াবে ঐ চুক্তির কতকগুলি শর্ত জানাইয়াছিলেন। সেগুলি তখন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। সে শর্তাবলীর দুই একটি উদ্ধৃত করিতেছি।

 ঐ চুক্তির শর্তাবলীর চতুর্থ পরিচ্ছেদের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে,

 “পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের নিকট হইতে যেসব কর্মচারী পাইবেন, তাহারা চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানে থাকিয়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব পালন করিবেন এবং চুক্তি অনুযায়ী প্রদত্ত সাহায্য কিভাবে ব্যবহৃত হইতেছে তাহা পর্যবেক্ষণ করার কর্তৃত্ব ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পাইবেন। এই চুক্তি অনুযায়ী কর্মচারীরূপে পাকিস্তানে আগত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ পাকিস্তান সরকারের সহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসেরই অংশ বলিয়া