পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬৬
শিরোনাম সূত্র তারিখ
সাপ্তাহিক ‘নও বেলালে’ প্রকাশিত রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত সম্পাদকীয় সাপ্তাহিক ‘নও বেলাল’। সূত্র: ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতিঃ বদরুদ্দীন উমর। পৃষ্ঠা-৬২ ৪ঠা মার্চ, ১৯৪৮

  এই পত্রিকাটিতে ৪ঠা মার্চ তারিখে পাকিস্তান গণপরিষদের ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব এবং তার সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের উপর রাষ্ট্রভাষা' শীর্ষক একটি দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নের সাথে পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনের ও সাংস্কৃতিক আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করে তাতে বলা হয়:

পাকিস্তান লাভ করিবার পূর্বে পূর্ব-পাকিস্তানবাসীদের ধারণা ছিল যে তাহাদের সংস্কৃতি, তহজিব, তমদুন সকল অবস্থায়ই অক্ষুন্ন থাকিবে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের এলাকাধীন বিভিন্ন প্রদেশের অধিকাংশ বাসিন্দা মুসলমান গতিকে, তাহাদের মধ্যে মজহাবী একতা ছাড়া ভাষাগত বিষয়ে বিভিন্ন প্রদেশের নানাবিধ পার্থক্য রহিয়াছে তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। যদি এক ভাষার আধিপত্যে অন্য ভাষার প্রসার সংকুচিত হয় অথবা অন্য প্রদেশের সংস্কৃতি নষ্ট হইবার সূচনা দেখা যায় তাহা হইলে যে প্রদেশের ভাষার মর্যাদার হানি হইয়াছে তাহার প্রতি অবিচার করা হইবে।

বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের তুলনা করে পত্রিকাটি বলেন:

সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের আমলেও গভর্ণমেণ্টের কারেন্সী নোটেও বাংলা ভাষার স্থান ছিল। পাকিস্তান সরকার বাংলাকে তুলিয়া ফেলিয়াছেন। পাকিস্তান সরকারের মনি অর্ডারের ফরম, ডাক টিকিট, পোষ্ট কার্ড ইত্যাদিতে বাংলার স্থান নাই।

প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীর উক্তি সম্পর্কে নওবেলাল বলেন:

এই প্রস্তাবের প্রসঙ্গে পাকিস্তানের উজিরে আজম জনাব লিয়াকত আলী যে অসংলগ্ন কথার অবতারণা করিয়াছেন তাহাতে বাস্তবিকই মর্মাহত হইতে হয়। তিনি বলিয়াছেন পাকিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র, তাই পাকিস্তানের ভাষা হইবে মুসলিমদের ভাষা উর্দু। এই সব অপরিণামদর্শী ভাষণের আলোচনাও এক দুঃখজনক ব্যাপার। তবে এই সব ঘোষণার প্রতিক্রিয়া যে মারাত্মক হইতে পারে সে সম্বন্ধে আমরা জনাব লিয়াকত আলী খানকে ভাবিয়া দেখিতে অনুরোধ করি।

খাজা নাজিমুদ্দিনের উক্তির সমালোচনা প্রসঙ্গে এতে বলা হয়:

এই প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের জনমতের উল্লেখ করিতে যাইয়া জনাব নাজিমুদ্দিন ও তমিজুদ্দিন খান যেসব অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করিয়াছেন তার জন্য নিশ্চয়ই তাহাদিগকে একদিন পূর্ব পাকিস্তানবাসীর নিকট জবাবদিহি করতে হইবে। খাজা সাহেবের পারিবারিক ভাষা উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ তাহাদের সাধারণ ভাষারূপে গ্রহণ করিতে চায় এই তথ্য কোথায় আবিষ্কার করিলেন?

গণপরিষদের মুসলিম লীগ দলীয় বাঙালী সদস্যদের উদ্দেশে পত্রিকাটি বলেন:

এইভাবে আপনার মাতৃভাষার মূলে যাহারা কুঠারঘাত করিতেছেন, তাহারা কি একবার ভাবিয়াও দেখেন নাই যে ভাষার ভিতর দিয়াই জাতির আশা-আকাংখা, সুখ-দুঃখ, আর্দশ প্রভৃতি রূপ পাইয়া