পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

68 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ বিশ্ব মানবতা জল্লাদ ইয়াহিয়ার জয় বাংলা ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ বিচার চায় ১ম বর্ষ, ২০শ সংখ্যা বিশ্ব মানবতা জল্লাদ ইয়াহিয়ার বিচার চায় জাতিসংঘ কি করতে পারবে? (রাজনৈতিক ভাষ্যকার) গত ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে বহু বিঘোষিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষেদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। বিশ্বের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিগণ প্রতি বারের মতই এবারও এই বিশ্ব সম্মেলনে যোগদান করেছেন। কিন্তু এবারে জাতিসংঘ সম্মেলনে আরো একটি নতুন স্বাধীন দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিতে গিয়েছেন। এ দেশটি হলো স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ । যদিও জাতিসংঘের সদস্যপদ তার অর্জিত হয়নি পৃথিবীর কোন দেশের কাছ থেকে এখনো রাজনৈতিক স্বীকৃতি পায়নি, তবুও এই বিশ্বপ্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশ তার নিজস্ব গণতান্ত্রিক অধিকারেই হাজির হয়েছে। জাতিসংঘের অধিবেশনে পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলের অধিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ব্যাক্তিস্বাধীনতা ও মানবিক অধিকারগত সমস্যার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বর্ণ বৈষম্য, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা, নারী নির্যাতন, কোন অঞ্চলে উত্তেজনা ও যুদ্ধের আশংকা প্রভৃতি বিষয়ে বহু জটিল প্রশ্ন নিয়ে প্রায় বৃহত্তর বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে থাকে। কিন্তু দুৰ্ভগ্যজনক ও নিষ্ঠুর সত্য এই যে, এই সব সমস্যা সমাধানে প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাতসংঘের ভূমিকা খুব উজ্জল নয়। ববং বিশ্বরাজনীতির দাবা খেলায় বহ মানবিক প্রশ্নই নানাভাবে উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। একদা লীগ অব নেশন্সের ব্যর্থতা মানব জাতির ভাগ্যে যে মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে এসেছিল, আজকের জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সে ব্যর্থতার নজির থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে; সম্ববত তাহলেই কেবল জাতিসংঘ ইতিহাসের সেই নিষ্ঠুরতম পুনরাবৃত্তিকে ঠেকাতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশে গত ছয় মাসে পৃথিবীর বৃহত্তর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এ শতাব্দীর সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড, নারী নির্যাতন লুণ্ঠন ওবর্বরোচিত ধ্বংসলীলায় যে নারকীয় ইতিহাস রচিত হয়েছে, যার কাছে চেঙ্গিস হালাকু কিংবা হিটলারের নৃশংসতাও স্নান হয়ে যায়, মানব ইতহাসের এমন নারকীয় ইতিহাস এমন বীভৎস দৃশ্য দেখেও জাতিসংঘের মতো বিশ্ব প্রতিষ্ঠানের কষ্ঠ তীব্রতর প্রতিরোধের ভাষায় সোচ্চার হয়ে ওঠেনি, সক্রিয় হস্তক্ষেপ মানবতার এই আপমান রোধে অগ্রসর হয়নি এবং প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খানের মতো পশ্চিম পাকিস্তান ঘেষা পুঁজিপতিকে মামুলি সফরে পাঠিয়ে জাতিসংঘ মোটামুটিভাবে তার দায়িত্ব শেষ করেছেন এমন বললে বোধ করি বাড়িয়ে বলা হবে না। বাংলাদেশের এই মর্মান্তিক ঘটনাকে জতিসংঘের সেক্রেটারী মিঃ উথান্ট কেবল “মানব সত্যতার দূরপনেয় কলঙ্ক বলেই খালাস হলে চলবে না; মানব সভ্যতার এই দূরপনের কলংকের যে হোতা, যে স্বনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের যড়যন্ত্র ও ক্রর ইচ্ছায় এ শতাব্দীর এতো বড় একটা ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হচ্ছে, দশ লক্ষ নর-নারী পশুর মত প্রাণ দিয়েছেন, পচিশ লক্ষ লোক ঘরবড়ী সর্বস্ব হারিয়ে অন্যদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, আরো লক্ষ লক্ষ মানুষ যেখানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখোমুখি বসবাস করছে, যার উন্মাদ খোলায় মানব সত্যতার এমন দূরপনেয় কলংক সূচিত হতে পারলো, বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘেরই দায়িত্ব সেই একরোখা ক্রর দানবের শাস্তি বিধান করা।