পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

70 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ বহু মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে আদ্রে জয় বাংলা ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ মালরো বলছেন... ১ম বর্ষ, ২০শ সংখ্যা বহু মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে আঁদ্রে যে কজন ফরাসী সাহিত্যিকের নাম আজ বিশ্বজোড়া, আদ্রে মালরো তার অন্যতম। মালরোর জীবন খুবই ঘটনাবহুল। মালরো তাঁর যৌবনে স্পেনের গৃহযুদ্ধে যান। লড়াই করে সাহসিকতার সঙ্গে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনীর সাথে। স্পেনের গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর, মালরো যান চীনে। সেখানে চীনের পক্ষ নিয়ে লড়াই করেন বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে। তারপর চীন থেকে নিজের দেশে ফিরে অংশ নেন নাৎসীবাহিনীর বিপক্ষে তাঁর দেশবাসীর প্রতিরোধ সংগ্রামের সময় তার পরিচয় হয় জেনারেল দ্যগল-এর কর্মধারার সাথে। মালরো এর আগে ছিলেন বামপন্থী। কিন্তু এখন থেকে হয়ে ওঠেন দ্য গলের মত স্বদেশ পন্থী যার গোড়ার কথা হল, দেশের স্বাধীনতা ও ক্ষমতাকে বিলুপ্ত করে আন্তর্জাতিক অর্থহীন। জাতীয় রাষ্ট্র (000000 00000) আজকের পৃথিবীতে একটি বিরাট রাজনৈতিক সত্তা। তাকে বাদ দিয়ে বিশ্বের রাজনীতির কথা, মানুষের মুক্তির কথা ভাবতে যাওয়া অবান্তর। দ্য গলের আমলে মালরো মন্ত্রী হন। তাঁর উপর ভার পড়ে সাংস্কৃতিক দপ্তরের। মালরোর নেতৃত্বে ফরাসী দেশের বিভিন্ন চিত্রশালা ও মিউজিয়ামগুলি নবজীবন লাভ করে। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় লিখিত হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিল্পকলা সম্পর্কে আধুনিকতম জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে বহু খণ্ডের একাধিক গ্রন্থ। মালরোর মতে, মানুষের ইতিহাস বুঝবার ক্ষেত্রে শিল্পের ইতিহাস অপরিহার্য। কারণ শিল্পের মধ্যে ধরা পড়ে মানুষের চেতনা। শিল্পের মধ্যে সেই মানুষ গভীরভাবে জানতে পারে, অনুভব করতে পারে নিজেকে। একটা সভ্যতাকে। মালরো সাহিত্যিক । তার উপন্যাসের খ্যাতি জগৎ জোড়া। মালরো শিল্প রসিক। মালরো যোদ্ধা। মালরো আবার রাজনীতির সাথে থেকেছেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর সেই রাজনীতি কেবল তাঁর নিজের দেশের নয়- স্পেন থেকে চীন তার ব্যাপ্তি। সাহিত্যক মলরো তাই ব্যক্তি হিসাবেও স্থান করে নিতে পেরেছেন পৃথিবীর নানা দেশের মানুষের মনে মালরো এ যুগের একজন বিশিষ্ট শক্তিমান ব্যক্তি। বর্তমানে এই প্রবীণ ফরাসী সাহিত্যক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে কতগুলি মূল্যবান মন্তব্য করেছেন। মালরো বলেছেনঃ বাংলাদেশের ঘটনা বিশ্বের করুণতম ঘটনাবলীর অন্যতম । কিন্তু বাঙালীদের হয়ে যাবে। আবেদন নিবেদনে কোন ফল হবে বলে মনে হয় না। বাঙালীকে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে যুদ্ধ করেই। এখন বাঙালীরা কেবল নির্ভর করতে পারে আত্মসাহস ও রণশক্তির উপর। অবশ্য মুক্ত রণাঙ্গনে, সম্মুখসমরে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া উচিত হবে না বাঙালীদের। বর্তমানে তা সম্ভব নয়। তাদের উচিত হবে গেরিলা যুদ্ধেই ভালভাবে চালিয়ে যাওয়া। বিদেশের কাছে গণতন্ত্র ও মানবতার নামে দরখাস্ত দাখিলের চাইতে বাঙালীদের আজ বেশী প্রয়োজন, সামরিক সংগঠন। বছর চল্লিশেক আগের অ্যাংগ্নোস্যাকসন উদারনৈতিকই বিবেক এখন আর বাস্তব নয়। আপন ভোলা আমেরিকানদের শুভেচ্ছার উপর নির্ভর করতে যাওয়া হবে ভুল... ” মালরো উপরের কথাগুলি লিখেছেন একটি চিঠিতে ভারতের বিখ্যাত নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের কাছে। কিছুদিন আগে মালরো আমেরিকার বিখ্যাত সাপ্তাহিক ‘টাইমস’-এর একজন সাংবাদিককে বলেনঃ