পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

72 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জয় বাংলা ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১ অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি ১ম বর্ষ, ২৩শ সংখ্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি (অর্থনৈতিক ভাষ্যকার) বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত। তাদের সঙ্গে দেশপ্রেমিক, কৃষক, মজুর ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক- এক কথায় ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে বংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ যার যার নিজের কর্মক্ষেত্রে এই মুক্তি সংগ্রামের অংশভাগী হয়ে দেশ মাতৃকার শৃংখল মোচনের জন্য সর্বস্ব পণ করেছে। অসহ্য দুঃখ-কষ্ট লাঞ্ছনা ও প্রতি মুহুর্তে নিশ্চিত মৃত্যু সম্ভাবনার মুখেও তারা জাতীয় মুক্তির মাত্র চবিবশ বছর আগে সাম্প্রদায়িক জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে রাষ্ট্রের পত্তন হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করে ভাষা, সাহিত্যে, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক জাতীয়তার ভিত্তিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতার জাতীয় মুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্যে সশস্ত্র সংগ্রামে কাতারবন্দী হয়েছে। শুধু ময়দানে স্লোগান দেয়া নয়, এক সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতিয়ার হাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে হত্যা করছে, প্রাণ দিচ্ছে। বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ, বাঙালী জাতি হিসেবে প্রাণ নেয়া ও দেয়ার মিলিত রক্ত ধারায় যে জাতীয় ঐক্য তুলেছে, এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তা অনন্য। সাম্প্রদায়িকতাবাদের কবর রচনায় ইতহাসের এই অনন্য অধ্যায়ের ভূমিকা অপরিসীম এবং সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের এটি প্রাথমিক সাফল্য। শুধু যারা ঔপনিবেশিক শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ধর্মীয় জিগির তুলে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শক্তির সেই সব দালালরা এই জাতীয়বাদের অভু্যদয়কে ভয় করে। শুধু তারাই এই মুক্তি সংগ্রামের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এই দুটি বিপরীত ধারার কথা যদি আমরা বিচার করি তা হলে অন্যান্য বিষয় বাদ দিলেও শুধু বাঙালী জাতীয়তাবাদের এই অভু্যদয়কেই নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ মৌলিক অগ্রগতি হিসেবে স্বাগত জানাতে হয় বাংলাদেশের জাতীয় এবং রাজনৈতিক জীবনে এই জাতীয়তাবাদী ধারার দুর্জয় শক্তি পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ভালভাবেই উপলদ্ধি করতে পেরেছে বলে ইয়াহিয়া খানের খসড়া শাসনতন্ত্রে দখলীকৃত বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার হরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিভেদ জিইয়ে রেখে সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদকে প্রতিহত করা। এটাই সাম্প্রদায়িকতাবাদী ঔপনিবেশিক শক্তির লক্ষ্য। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ প্রভৃতি দালাল দলগুলো পশ্চিম পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শক্তির লক্ষ্য পূরণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। কিন্তু এই দালালরা চিহ্নিত ও ধিকৃত। তাদের শক্তি পুরোপুরিভাবে সামরিক জান্তার পশুশক্তির পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভরশীল। এরা মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধাদের আক্রমণে এখন নিজেরাই সন্ত্রস্ত। তবে সংখ্যায় একেবারে নগণ্য হলেও স্বদেশে ও বিদেশে প্রগতিবাদী এবং বামপন্থী বলে কিছু লোক আছেন যাঁরা অভিহিত করে এই মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা ও সার্থকতার প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে প্রতিটি মানুষই কাতারবন্দী হবে। এমন আশা করা সব সময় করা যায় না। কিন্তুতা সত্ত্বেও বলতে হয় যে প্রগতিবাদের নাম করে যারা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ভূমিকা ও তাৎপর্য সম্পর্কে সংশয়বাদী প্রশ্ন তুলে নিজেদেরকে এই সংগ্রাম থেকে দূরে রাখেন তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামেরই বিরোধিতা