পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

74 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সেই সংবিধানটি জনগণের হাতে উপরোক্ত সমাজ গঠন ও অর্থনৈতিক রূপকল্প বাস্তবায়নের দলিল। শাসনতন্ত্রে বিধিবদ্ধ মৌলনীতির ভিত্তিতে উপরোক্ত শোষণমুক্ত ন্যায় ও সাম্যবাদী সমাজ সঠন নির্ভর করবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের ম্যানিফেষ্টোতে উপরোক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ সম্পর্কেও সুস্পষ্টভাবে পথ নির্দেশ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শিল্পের জায়গায় সরকারী খাতের সম্প্রসারণ এবং গুরুত্ব অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন শিল্প, ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা ও আমদানী রফতানী বানিজ্য জাতীয়করণ, যে পরোক্ষ কর সাধারণ মানুসের কাঁধে চেপে বসে, কর ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে উপরোক্ত পরোক্ষ করের জায়গায় প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিক পরিমাণ অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি প্রশাসনিক পদক্ষেপের অঙ্গ। মূলধন ও ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক অংশীদারিত্ব মূলধনে শ্রমিক শ্রেণীর অংশীদারিতু সম্পর্কে ম্যানিফেষ্টোতে বলা হয়েছে যে, যে সমস্ত শিল্প কারখানা সতুর জনগণের মালিকানাধীনে আনা হবে না, সরকার ক্রমবর্ধমান হারে তাদের ইকুইটি মূলধন দখল করবে। সরকার যেটুকু ইকুইটি মূলধন আয়ত্ত করবে, সংশ্লিষ্ট শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকগণ যৌথভাবে সেই পরিমাণ অংশের মালিকানা লাভ করবে এবং সেই পরিমাণ অংশের মুনাফার ভাগ পাবে। শ্রমিকরা কেবল ইকইটি মূলধনের নয়, শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনায়ও অংশগ্রহণ করবে। এই ভাবে শ্রমিক সমাজ যেমন ক্রমান্বয়ে অধিক হারে শিল্পে মালিকানা লাভ করবে তেমনি শিল্প পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাতেও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। কৃষি ও গ্রামের জনগণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ পল্লী অঞ্চলের অধিবাসী। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকর্মের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই শোষণমুক্ত এবং ন্যায় ও সাম্যবাদী সমাজ গঠন বা সমাজতানিন্ত্রক অর্থনীতির সফল রূপায়ণ কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ছাড়া সম্ভব নয়। তাই আওয়ামী লীগের ম্যানিফেষ্টোতে এ সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, “কৃষি ও গ্রামের মানুষের অবস্থার উন্নয়নের উপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া না হলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের সমস্ত পরিকল্পনাই অর্থহীন হয়ে পড়বে। এক দিকে আমাদের গোটা সমাজের সর্বত্র দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়েছে, অন্যদিকে গ্রামে ও শহরের জীবনযাত্রার মানের মধ্যে গুরুতর বৈষম্য রয়েছে।” এ প্রসঙ্গে ম্যানিফেষ্টোতে আরও বলা হয়েছে যে এর পিছনে ঐতিহাসিক কারণ থাকলেও নিকট অতীতে সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির জন্য এই বৈষম্য আরও বেড়ে গিয়েছে, ফলে গরীব চাষীর হাত থেকে সম্পদ ধনী পুঁজিপতিদের হাতে ব্যাপকভাবে পাচার হয়ে গিয়েছে। আওয়ামী লীগ অবিলম্বে গ্রামঞ্চলের জনগণকে এইরূপ শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার অঙ্গীকার করেছে। আর এটা করতে হলে কৃষি খাতে সুদূরপ্রসারী বিপ্লবের প্রয়োজন। এই ধরণের বিপ্লবের পূর্বশর্ত হলো ভূমি ব্যবহারের বর্তমান পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন এবং বহুমুখী সমবায়ের মত নয়া প্রতিষ্ঠান স্থাপন। সামাজিক ন্যায় নীতি ও অর্থনৈতিক সাম্যের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের সর্বশ্রেণীর মানুষকে একটি শোষণহীন সমাজ গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের বর্তমান রক্তমোক্ষণ নিছক ভাববিলাশের ফলশ্রুতি নয়।