পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

79 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড করলে বুঝতে পারতেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গোড়াতে এই কার্যকারণই প্রচণ্ডভাবে বিলুপ্তির পূর্বেকার পাকিস্তানের যে পশ্চিম পাকিস্তানী অর্থনৈতিক অক্টোপাসের শুড় দেখে আমাদের অনেকের মনে উপরোক্ত সংশয় জাগে সেই অক্টোপাসটি আসলে বেড়ে উঠেছে বাংলাদেশের সম্পদ গ্রাস করে। এক কথায় বলতে গেলে পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেনি। বরং বাংলাদেশই নিজেকে রিক্ত করে পশ্চিম পাকিস্তানের এই বিপুল অর্থ ও শিল্প সম্পদকে গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশ দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে নিজের রক্ত দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছে রাজনৈতিক পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ থাকায়। কাজেই পশ্চিম পাকিস্তানের বোঝা বহনের দায় থেকে মুক্ত, দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ অনেক সহজে এবং আরও ভালভাবে নিজেকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। যাঁরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত আপাতদৃষ্টিতে তারা প্রধানত দুটাে লক্ষণ দেখে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সেই কারণের একটা হল বাংলাদেশের ঘনবসতি। মাত্র ৫৫ হাজার ১২৬ বর্গমাইল এলাকায় সাড়ে সাত কোটি লোকের বাস। সম্ভবতঃ বাংলাদেশই পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকা। এই ছোট্ট পরিসরে অগুনতি মানুষ যেন কোন ক্রমে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে। তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পৌনঃপুনিক আঘাত। দ্বিতীয় কারণ হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা। এই অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতাকেই তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বলে ভুল করছেন। কিন্তু এ কথাটা মনে রাখার প্রয়োজন রয়েছে যে গত ২৩ বছরে বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ভাবে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার যোগান দিতে বাধ্য হয়েছে।