পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বঙ্গবাণী ১৩ জুন, ১৯৭১ বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতি কাঁদে ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা সম্পাদকীয় বিশ্ববাসীর নিকট আমাদের আকুল প্রার্থনা- তাঁর ইয়াহিয়া চক্রের বিচার করুন। অন্যায়ের যদি বিচার না হয়, তাহলে সত্যতা, মানবতা, ন্যায়বিচার- এসব বলে আর বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা যেন না হয়। কারণ এই শব্দগুলি যদি শুধু মুখেই বলা হয়- কিন্তু সেগুলিকে যদি কর্মে ব্যবহার অথবা তা বাস্তবে প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে সেই বলা কথাগুলি শুধু বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে না- প্রহসনে রূপান্তরিত হয়। তখন সেই ভাল ভাল কথাগুলির উপর মানুষ ক্রমে আস্থা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে এই ভাল কথাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র নিমর্ম হয়ে ওঠে। ফলে তাদের অত্যাচারের মাত্রাও যায় বেড়ে। এ পর্যন্ত পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলি মানুষের থাকার অধিকারের কথা বলেছেন। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বড় বড় বুলি আওড়িয়েছেন। বিশ্ববাসীকে আশার কথা শুনিয়েছেন। এখন দেখা যাচ্ছে তা শুধু কথায় রয়ে গেছে- বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, এখানকার মানুষের উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের জন্য (একমাত্র ভারত ছাড়া) কেউ কিছু করলেন না বললেই হয়। যেটুকু ও বা কেউ কেউ করলেন তা বাংলাদেশের শত্রকে তাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে উপযুক্ত নয়। বরং এই মৃদু প্রতিবাদে ইয়াহিয়া চক্রের অত্যাচার আরও বেড়ে গেল। নির্বিচারে নির্যাতন ও গণহত্যায় বাংলার আকাশ বাতাস বিষাক্ত করে তুলল। গত দুই মাসের যুদ্ধে বাংলা প্রায় ১০ লক্ষ সাধারণ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। প্রায় ৪০/৫০ লক্ষ জনগণ ছিন্নমূল লতার মত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্চায হতে হয় এ বিষয় নিয়ে বিশ্বের বৃহৎ শক্তি মাথা ঘামাচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে নির্লজ্জ হত্যার নজির এক ইয়াহিয়া ছাড়া অন্য কোন ইতিহাসে পাওয়া যায় না। লক্ষ লক্ষ নারীর সতীতুকে বিনষ্ট করা, তাদের উলঙ্গ করে মাঠে ছেড়ে দেওয়া ও ঘরে আবদ্ধ করে রাখা, একই মেয়ের উপর পর পর কয়েকজন নরপশুর আত্মীয়ের সামনে অত্যাচার, স্তন কেটে ফেলে পিতাকে উপহার দেওয়া, স্ত্রী-লিঙ্গে বেয়োনেট দিয়ে খোঁচান, শিশুকে ধরে পা চিরে বা গাছে গ্রামের বাড়ীঘর নির্বিচারে ধ্বংস করা ও জুলিয়ে দেওয়া, মানুষের ধান-চাল, সোনা অর্থাৎ যা কিছু সম্পদ, সবই লুন্ঠন করা। এসবেও যদি বিশ্ব বিবেক কাতর হয়ে না ওঠে এবং তার প্রতিকারের জন্য কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ না করে- তা হলে মানবতা, বিশ্বশান্তি, বিশ্বপ্রেম প্রভৃতি শব্দের মূল্য কোথায়? আজ মানবতা পৃথিবীর দ্বারে কেদে মরছে। এরপরও কেউ যদি action না দিয়ে শুধু শান্তির কথা বলে- তা প্রহসন ছাড়া আর কি হতে পারে?

  • বঙ্গবাণীঃ স্বাধীন বাংলার সাপ্তাহিক মুখপত্র। সম্পাদকঃ এ, এম, হোসেন। ফিরোজ প্রিন্টিং প্রেস, নওগাঁ (রাজশাহী) থেকে মুদ্রিত ও এম এ জলিল কর্তৃক প্রকাশিত।