পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

87 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ পাকিস্তানের বিধ্বস্ত অর্থনীতি স্বদেশ ১৬ জুন, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ১ম সংখ্যা পাকিস্তানের বিধ্বস্ত অর্থনীতি যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকেই করাচীর কাগজগুলি বিদ্রোহীদের খবরাখবর পুরো চেপে যায় এবং তার ফল এতো পরিষ্কার হয়েছিল যে রাজনীতির বিশেষষ্ণরা পর্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে রাওয়ালপিণ্ডি সরকার যবনিকার সামান্য অংশ তুলে যখন দেখালেন তখন পশ্চিম পাকিস্তানীরা তার অংশটুকু মাত্র দেখে স্তম্ভিত এবং বিষগ্ন হয়ে পড়লেন। তাঁরা প্রথম এই খবর জানলেন যখন মুহম্মদ ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার বিদেশী চারশো কোটি পাউণ্ড ঋণ ছ'মাসের জন্যে বিশেদী শক্তিগুলির কাছে আপতকালীন স্থগিতের জন্য আবেদন জানালেন এবং জুলানী তেলের দাম শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগের ওপর বাড়িয়ে দিলেন; তাছাড়া ৪৬টি জিনিষের ওপর দুই থেকে তিন গুণ কর স্থাপনও ছিল এর মধ্যে। ফলে জনগণের কাছে এই ঘটনাগুলি এলা এক ভয়াবহ জয়লাভ যদিও সম্ভব, জাতীয় উন্নতির ক্ষেত্রে তা ভয়াবহ দুৰ্গতির সূচনা। এই তত্ত্বের সমর্থনে বলা যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানী ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যবসাপত্র গোটাতে শুরু করেছেন, কারণ তাঁদের তৈরী জিনিষপত্রের দুই-তৃতীয়াংশের বাজার ছিল পূর্বাঞ্চল। কিন্তু সে বাজার আপাতত বন্ধ। দ্বিতীয়তঃ পূর্ব পাকিস্তানী বাঙালী ব্যাপক হারে ভারতে শরণ নেওার ফলে চা শিল্পের পক্ষে তা এক চরম বিপদের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে- পাকিস্তানকে তারও বিকল্প রপ্তানির কথা চিন্তা করতে হবে। অবশ্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে পাট রপ্তানির ক্রমবর্ধমান হার কমে যাওয়ায়। পাকিস্তানের কাছে এই পাট ছিল বিদেশী মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় সূত্র। কেবলমাত্র গত সপ্তাহের গোড়ার দিকেই কিছু রপ্তানি করা গেছে। সব মিলে যুদ্ধের দরুন দৈনিক মূল্য দিতে হচ্ছে ২০ লক্ষ পাউণ্ড করে যে জাতির যুদ্ধের আগে জমা মোট টাকা ছিল ৮ কোটি ২০ লাখ পাউণ্ড তার পক্ষে এটা একটা বেশ ভারী ধরণের বোঝাই বলতে হবে। নিকট ভবিষ্যতে এই অবস্থার খুব একটা উন্নতির আশা নেই। অফিসার মহল থেকে বলা হচ্ছে, পূর্বাঞ্চলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে, কিন্তু অন্যেরা বলছেন যে, অবস্তা এখনও অনেকখানিই বিপ্লবীদের পক্ষে রয়ে গেছে। সেখানে জাতীয় করের ৪০ ভাগ কর দেওয়া বন্ধ রয়েছে। রাজনৈতিক স্থৈর্য ও ফিরে আসেনি। গেরিলাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি এবং সরকারী কর্মচারীদের প্রতি কাজে যোগদানের আদেশ প্রদান-সামরিক জুন্টার এই বড়শির টােপে অল্প বাঙালীই ধরা দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, পূর্বাঞ্চলের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ১৬৭ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে মাত্র দুইজন তাঁদের স্বাধীনতার আন্দোলন আঞ্চলিকভাবে পরিত্যাগ করেছেন। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং পূর্বের নিরবিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ পশ্চিমেও রাজনৈতিক ধাক্কা বয়ে এনেছে। প্রাদেশিক বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনের অপরাধে উত্তর পশ্চিম সিন্ধু প্রদেশের প্রায় ১২ জন নেতাকে সাম্প্রতিককালে