পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

93 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড দৈনন্দিন একটা রিপোর্ট দেয়ার রেওয়াজ আছে। পাকিস্তান বাহিনীর নির্দেশ হচ্ছে, এই রিপোর্ট একমাত্র উর্দুতেই দেয়া চলবে। জেনারেল ওসমানী এই সর্বপ্রথম তাঁর সুবেদার মেজরকে বাংলায় রিপোর্ট দেয়ার অনুমতি দেন। এই জন্য পাকিস্তান সামরিক চক্র তাঁর কাছ থেকে কৈফিয়ৎ দাবী করে; এবং তিনিও তার যথাযোগ্য জওয়াব দেন। আর একটি ঘটনা হয়ত অনেকেরই জানা নেই। জেনারেল ওসমানী এক দানপত্রে তাঁর সকল সম্পত্তি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রতি এবং বাঙালী বাহিনীর প্রতি তাঁর আন্তরিক প্রীতির পরিচয় এখানেই পাওয়া যায়। জেনারেল ওসমানী ১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পূর্ব-বাংলার সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষ শাহ নিজাম উদ্দিন ওসমানী হজরত শাহজালালসহ গৌরগোবিন্দ সিংহের রাজত্বকালে এদেশে আসেন। তাঁর পিতা মরহুম খান বাহাদুর মুফিজুর রহমান, বি, এ, কে, এইচ, এম, সততা, মানবপ্রীতি ও নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমের জন্য খ্যাত ছিলেন। জেনারেল ওসমানী কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সিলেট গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ইংরেজীতে বিশেষ দখলের জন্য প্রিটোরিয়া প্রাইজ লাভ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি কলা বিভাগে ডিগ্ৰী লাভ করেন এবং ১৯৩৯ সালে মাষ্টার ডিগ্রীর চূড়ান্ত পরীক্ষার পূর্বেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৪০ সালের ৫ই অক্টোবর তিনি ইণ্ডিয়ান মিলিটারী একাডেমী, দেরাদুন থেকে সামরিক শিক্ষা শেষ করে বৃটিশ ইণ্ডিয়ান কমিশন প্রাপ্ত হন। এরপর থেকে তাঁর দ্রুত পদোন্নতি হয়১৯৪১ এর ফেব্রুয়ারীতে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৪২ এর ফেব্রুয়ারীতে তৎকালীন বৃটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর হন ও মাত্র ২৩ বছর বয়সে একটি যান্ত্রিক পরিবহন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হয়ে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বৰ্মা রণাঙ্গনে যে অল্প কয়েকজন অশ্বেতাঙ্গ অধিনায়ক যুদ্ধ পরিচালনায় নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৬ সালের বৃটিশ সেনাবাহিনীতে ইষ্টার্ন কমাণ্ড সিলেকশন কমিটি কর্তৃক তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য মনোনীত হন এবং ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত ফাষ্ট পোষ্টওয়ার স্টাফ করেন এবং স্টাফ কলেজে ১৯৪৮ সনের কোর্সে স্থান অর্জন করেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে তিনি আই,সি এস, এ কোয়ালিফাইড হওয়ায় ইণ্ডিয়ান পলিটিক্যাল সার্ভিসের জন্যও ১৯৪৬ সালেই মনোনীত হন। কিন্তু সৈনিক জীবন পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। পরে ১৯৪৭ সনের শুরুতে তৎকালীন ভারতীয় অন্তবর্তী সরকারের পররাষ্ট্র সচিব জওহরলাল নেহেরু১ তাঁকে একটি কূটনৈতিক পদ গ্রহণের জন্য আহবান জানান। জেনারেল ওসমানী সে প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন। একই সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পদের জন্য মনোনীত হন এবং বৃটিশ ভারতের সিমলাস্থ জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সএ কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেলের শাখায় সেকেণ্ড গ্রেড স্টাফ অফিসার পদে নিযুক্ত হন। ভারত বিভাগের পরপরই তিনি পাকিস্তানের জন্য অংশ নির্ধারণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই বছর সাতই অক্টোবর পাকিস্তানে তাঁকে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পদে তাকে উন্নীত করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে তিনি কোয়েটা ষ্টাফ কলেজের কোর্সে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সনে ষ্টাফ কলেজ থেকে ডিগ্রী লাভ করার পর তাঁকে তদানীন্তন চীফ অব দি জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল রেজিনাল্ড হাটন-এর সহকারী স্টাফ অফিসার পদে নিয়োগ করা হয়।