পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

109 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় স্বদেশ ১৬ আগষ্ট, ১৯৭১ এই প্রহসন নতুন নয় ১ম বর্যঃ ১১শ সংখ্যা এই প্রহসন নতুন নয় বঙ্গবন্ধুর বিচারের প্রহসন আরম্ভ হয়েছে। অবশ্য এই জাতীয় যড়যন্ত্র ও বিচারের নামে প্রহসনের অবতারনা এই নতুন নয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই যড়যন্ত্রের উপর ভিত্তি করে। তাই তো পাকিস্তান সংগ্রামে যাদের দান সর্বাপেক্ষা অধিক, প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে তারা পেয়েছে নির্বিচার জেল, জুলম, লাঞ্জনা বঞ্চনা। ইতিহাসের পাতা থেকে তাদের নাম কৌশলে মুছে দেয়া হয়েছে। বাংলার অগ্নিপুরুষ শেরে বাংলাকে পেতে হয়েছে দেশদ্রোহী আখ্যা; সম্মুখীন হতে হয়েছে বিচার প্রহসনের। মহান নেতা হোসেন শহীদ সোহরওয়াদীকে পেতে হয়েছে ভারতের লেলিয়ে দেয়া কুকুর খেতাব; আমৃত্যু অশেষ লাঞ্জনা, নিপীরণ জেল জুলুম। বাংলার মহান নেতা বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মজিবুর রহমান আজ ইয়াহিয়ার তথাকথিত আদালতে বিচারের নামে প্রহসনের সম্মুখীন। মূলত এই প্রহসন নতুন কিছু নয়। বাঙালীর সামগ্রিক মানবধিকার সংরক্ষনের জন্য যে কষ্ঠ সদা সর্বদাউচচকিত হয়েছে সে কষ্ঠ হয় ইসলাম বা জাতীয় সংহতির শত্ৰু ভারতের চর নতুবা দেশদ্রোহী আখ্যায় ভুষিত করা হয়েছে। জানা কথা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে পশ্চিমা প্ৰভুদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। আই তো জেল জুলুম হয়রানি তার নিত্যসঙ্গী। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন আমলে তাকে ৬টি মিথ্যা মামলার জের টানতে আসামীর কাঠগড়ায় দাড়াতে হয়েছিল। বিনা বিচারে দীর্ঘ কারবাসের পর সসম্মানে মুক্তি পেয়ে ১৯৬২ সালে তিনি পুনরায় কারান্তরালে যেতে বাধ্য হলেন। ৬৪ সালেও তিনি আয়ুব খার বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সপক্ষে নির্বাচনী অভিযানে নেমে বহু মিথ্যা মামলাজনিত হয়রানী সম্মুখীন হয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাস হতে আরাম্ভ করে মে মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত গড়ে দৈনিক তার বিরুদ্ধে একটি করে মামলা আনীত হয়। এই সময় অস্ত্র সংগ্রহ ও গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতির অভিযোগও নেতার বিররুদ্ধে আনা হয়। তারপর দীর্ঘ ১১ মাস কারাবাসের পর তার বিরুদ্ধে আনীত হয় কুখ্যাত আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা। অভিযোগ আনা হয় যে ভারতের যোগসাজশে ও অর্থানুকূল্যে নেতা বাংলাদেশেকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিনত করতে চেয়েছিলেন। আয়ুব খার আদালতে নয় পূর্বের ন্যায় গণআদালতের রায়ে তিনি মুক্তি পান। দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটেছে। এবারে মঞ্চে ইয়াহিয়া। এবারেও নেতার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ। বহ বিচিত্র সেই সব অভিযোগএকটা জিনিস লক্ষনীয়, আজকে যিনি মদ্যপ, নরখাদক ও ব্যাভিচারীদের আদালতে বিচার প্রসহসনের সম্মুখীন তিনি অতীতেও এই জাতীয় ব্যক্তি বিশেষের কাছে দেশদ্রোহিতার আখ্যা পেয়েছিলেন। আকার আকৃতিতে না হউক চরিত্রগত দিক থেকে গোলাম মহম্মদ মীর্জা বা আয়ুব ইয়াহিয়া সমগোত্রীয়। আজ যারা বিচারক, আমাদের দৃষ্টিতে তো বটেই সারা দুনিয়ার সভ্য মানুষের মানদণ্ডে তারাই প্রকৃত অপরাধী। বঙ্গবন্ধু তার বিচারের বৈধতা এই দৃষ্টিকোন থেকেই চ্যালেন্স করেছেন। বহু যড়যন্ত্র ও বহু বিচার প্রহসন থেকে বঙ্গবন্ধু অপার করুনাময়ের কৃপায় নিস্কৃতি পেয়েছেন। অতীতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলে আমরা নেতাকে ফিরিয়ে এনেছি। এবারে অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হবে সুদৃঢ়, বাংলার মাটি থেকে দুৰ্বত্তদের উৎখাত ও বন্দী করে আমরা বিনিময়ে ছিনিয়ে আনব পরমপ্রিয় নেতাকে। একথা সত্য যে নেতার সামান্যতম ক্ষতি সাধিত হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ঠেকিয়ে রাখা দুস্কর হবে।