পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

111 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বাংলাদেশ ২৩ আগষ্ট, ১৯৭১ ৬ দফা না মুজিববাদ? ১ম বর্যঃ ১২শ সংখ্যা সম্পাদকীয় ৬ দফা না মুজিববাদ? বাংলাদেশে বহু বিচিত্র দেয়য়ালের লিখন দেখেছি। কোথাও দেখেছি পাঞ্জাবী কুকুর বাংলা ছাড়; আবার কোথাও দেখেছি পশ্চিম পাকিস্তানী পশুরা মানুষ হত্যা করেছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি। স্থানে স্থানে প্রত্যক্ষ করেছি, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘজীবি হউক। এক জায়গায় দেখেছি লেখা রয়েছে মুজিববাদ দীর্ঘজীবি হউক। এই পোষ্টারটি আমার চিন্তাস্রোতকে বিঘ্নিত করেছে, তাড়িত করেছে নতুন ভাবনার পথে। সত্যি কি মুজিববাদ বলে বিশ্বে কিছু প্রতিষ্ঠিত হতে যাচেছ? আজকে শেখ মুজিব কোন ব্যাক্তির নাম বা কোন দলীয় প্রধান নয়, শেখ মুজিব এক কালজয়ী আদর্শ, এক জুলন্ত শিখা। এই অগ্নিশিখার আলোকে অনাগত ভবিষ্যতের অগনিত নিপীড়িত জনতা পথ দেখে নেবে। বিশ্বের যেখানে অত্যাচার , অনাচার, সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-শাসন, ফ্যাসিবাদী নির্যাতন, নিমর্ম আঞ্চলিক বৈষম্য বিরাজমান, সে সব এলাকার মানষের জন্য মুজিব এক বলিষ্ট সোচ্চার প্রতিবাদ, স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে অনড় চ্যালেঞ্জ; বাস্তব, প্রাণবন্ত ও নির্ভেজাল গণতন্ত্রের প্রতীক এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিমূর্ত প্রকাশ। অন্যান্য বহু প্রসঙ্গকে না টেনেও শুধুমাত্র নেতা প্ৰনীত ৬ দফা কর্মসুচির আলোকেই উপরিউক্ত সত্যকে নিৰ্দ্ধিধায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা যদিও পাকিস্তানের দুটি বিচ্ছিন্ন অংশের আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরনের একটা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কর্মসূচী চিল, আজকের দিনে সেটা বাংলাদেশের জন্য এক দফায় রূপান্তরিত হলেও অদূরভবিষ্যতে এর আবেদন চিরন্তন বলেই আমাদের বিশ্বাস । ৬ দফা কালজয়ী, ৬ দফা এখন মুজিববাদ এ রূপান্তরিত। তদানীন্তন পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট এলাকা বাং এখন স্বাধীন সত্তা নিয়ে বিরাজমান। পশ্চিম পাকিস্তানের অবস্থা ভঙ্গপ্রায়, টলটলায়মান। বিলুচিস্তানের মানুষের বিক্ষোভ ধূমায়িত। ৮ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর কাছে লিখিত একটি পত্রে সেখানকার ছাত্রশ্রমিক , রাজনীতিবিদ তথা সাধারন মানুষের পাঞ্জাব বিদ্বেষী মনোভাব স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ পাকিস্তানে যে জাতিগত বৈশিষ্ট চূড়ান্তভাবে লাঞ্জিত, আঞ্চলিক শোষণের শিকার হিসাবে অবহেলিত এলাকার চেতনা মুমূর্ষ প্রায়, পাঞ্জাবী শোষক ও শাসকের জগদ্দল পাষাণ বেদী হতে মুক্তির চিরন্তর আকাঙ্কা আকাশ প্রমাণ, তারই মুর্ত প্রকাশ উক্ত পত্র। অপর দিকে সীমান্তের মানুয়েরা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবীতে সোচ্চার সীমান্ত গান্ধী আব্দুল গফফার খানের অতীতের বক্তব্য ও সাম্প্রতিক কার্যকলাপ, তদীয় সন্তান ওয়ালী খানের সাম্প্রতিক বিবৃতি একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে জাতিগত সত্তার বিলুপ্তি বা অবলুপ্তি অসম্ভব , সাম্রাজ্যবাদী শোষণ অকল্পনীয়। এই চেতনাবোধের গভীরতা আর ব্যাপ্তির পেছনে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ কর্মপ্রচেষ্টা এবং সুনিদিষ্ট রাজনৈতিক অর্থনৈতিক প্রোগ্রাম। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। সারা পশ্চিম পাকিস্তান ভগ্নোনুখ। বিদ্রোহ ও বিক্ষোপ ঘনায়িত। এমনি পরিস্থিতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের অস্তিত্ব প্রায় বিলীয়মান। এমতাবস্থায় কোন যাদুমন্ত্র, রক্তচক্ষু, সামরিক জান্তার নির্বিচার গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ বা নারী ধর্ষণ পশ্চিম পাকিস্তানকে একত্রিত রাখতে অক্ষম । এই মুমুর্তে ভগ্নোনুখ পশ্চিম পকিস্তানের আশু বিচ্ছিন্নতা রোধের জন্য প্রয়াজন বঙ্গবন্ধু প্ৰনীত ৬ দফা কর্মসূচীর অনুরূপ কোন বাস্তব ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ। এ কথা সত্য যে ৬ দফার আক্ষরিক প্রয়োগ হয়ত সেখানে সম্ভব নয় কিন্তু তার