পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

118 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সেই অতীতে যেন আর ফিরে না যাই বাংলাদেশ ১ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্যঃ ১৯শ সংখ্যা সম্পাদকীয় সেই অতীতে যেন আর ফিরে না যাই ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ আর ২৫শে মার্চের রাতের আধার থেকে ফেলে আসা আজকের ১ লা নভেম্বর সাড়ে সাত কোটি বাঙালী জাতির অতুলনীয় ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সংগ্রামের এক অভূতপূর্ব ইতিহাস। এই ইতিহাস সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে এক নতুনতর সৃষ্টি। এই সৃষ্টি আগামী দিনের পৃথিবীকে দেখাবে নতুন পদ ও মত। ২৪ বছরের শাসন-শোসণের জিঞ্জির ভেঙ্গে বাঙালী জাতি চেয়েছিল সম অধিকারের ভিত্তিতে একত্রে বাস করতে এক পাকিস্তানে কিন্তু সম্রাজ্যবাদী শক্তির প্ররোচনায় এদেশের শাসক আর শোষকগোষ্ঠী ভেঙ্গে খান খান করে দিল সেই সদিচ্ছাকে। পদদলিত করে দিল তাদেরই দেওয়া নির্বাচনের রায়কে। বাঙালীর ন্যায্য অধিকার থেকে বাঙালীকে করল বঞ্চিত। ক্ষমতা হস্তান্তর আর আলোচনার সুযোগ নিয়ে বাঙালী নিধনের যে যড়যন্ত্র ইয়াহিয়া গোষ্ঠী করে চললো বাঙালী ভাবতে পারেনি তার হিংস্রতা হতে এতো পৈচাশিক ও নগ্নতায় ভরপুর । লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র জনতাকে গুলি করে হত্যা করে আর প্রায় এক কোটি বাঙালীকে গৃহত্যাগে বাধ্য করে নয় পিশাচ ইয়াহিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কি আশা করেছিল সেটা প্রকাশ হয়ে পড়েছে সাংবাদিক মিঃ এ্যান্থনী মাসকারেনহাসের লিখিত গ্রন্থ দি রেপ অব বাংলাদেশ নাম পুস্তিকায়। অপ্রস্তুত বাঙালী জাতি ক্ষনিকের তরে মুষড়ে পড়েছিল এই নারকীয় হত্যালীলা আর হত্যা যজ্ঞের রূপ দেখে কিন্তু দুর্ভাগ্য ইয়াহিয়া খানের তিনি চিনতে পারেননি এই বাঙালী জাতিকে। বাঙালী মচকাবে তবু ভাঙ্গবে न्। অচিরেই শুরু হয়ে গেল পালটা আঘাত হানার পালা। হাজার হাজার তরুনেরা যোগ দিতে লাগল মুক্তিফৌজে- শিক্ষা নিতে লাগলো আধুনিকতম গেরিলা যুদ্ধের কায়দা এক একজন মুক্তিফৌজ এগিয়ে এল হানাদার দসু্যদের নিধনে। মুক্তিফৌজের আক্রমন ধারা যতই তীব্র হতে তীব্রতর হতে লাগল পশু ইয়াহিয়ার সামরিক শক্তি ততই অত্যাচারের মাত্রা দিল বাড়িয়ে। নিরীহ গ্রামবাসীদের ধন সম্পদ লুট করে বাড়ী ঘরদোর জুলিয়ে দিয়ে বাঙালী মা বোনদের মান-ইজ্জত নষ্ট করে তারা প্রতিশোধের তাণ্ডবলীলায় মেতে উঠলো মেতে উঠল কিন্তু তবু আজকে কি দেখতে পাচ্ছি। এক একজন মুক্তিযোদ্ধা চার-পাচগুন শক্তিশালী হানাদার দসু্যকে খতম করে চলেছে। দুর্জয় সাহস আর মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করার বলিষ্ঠ শপথে আমাদের মুক্তিবাহিনী আজ দৃঢ় সঙ্কল্পচিত্ত। দেশ-বিদেশী বন্ধুরা দিচ্ছেন আধুনিকতম সমরাস্ত্র। শত্রর বুকে শেষ আঘাত হানার জন্য আজ আমরা কৃত সঙ্কল্প। আমরা জানি অমানিষার অন্ধকার কেটে গিয়ে পূর্বকাশে নবতর সুর্যোদয় ঘনিয়ে আসছে। বাংলার আকাশে নতুন সূর্য উঠবে এবং সেই আলোকে প্রদীপ্ত হয়ে উঠবে প্রতিটি বাঙালীর মনপ্রাণ, আর সঙ্গে সঙ্গে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালী কুলবধুদের উপসনার সুমধুর কণ্ঠস্বর বেজে উঠবে বাংলা মায়ের বুকে। আর সেই দূরপ্রত্যয় নিয়েই বলতে চাই-যে অতীতকে আমরা পদদলিত করে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছি, সেই অতীতে যেন আর আমরা ফিরে না যাই।