পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

139 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় স্বাধীন বাংলা ২৫ জুলাই, ১৯৭১ মুক্তিসংগ্রামের বিজয়ের স্বার্থে ১ম বর্যঃ ৩য় সংখ্যা সম্পাদকীয় মুক্তিসংগ্রামের বিজয়ের স্বার্থে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চার মাস পুর্ণ হইল। চবিবশ ঘন্টা, আটচল্লিশ ঘন্টা বা এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশকে পদানত করা সম্বব হইবে, এই হিসাব নিয়া যাহারা বাংলাদশের সামরিক অভিযান শুরু করিয়াছিল ইসলামাবাদের সেই জঙ্গী শাসকদের মুখে ছাই দিয়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ দৃঢ়পন লড়াই চালাইয়া যাইতেছে এবং শত্রর বিরুদ্ধে একের পর এক গৌরবময় বিজয় অর্জন করিয়া চলিয়াছে। বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ ও আপোষহীন এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করিতে প্রস্তুত। ইয়াহিয়ার দসু্যবাহিনীর অবর্ননীয় অত্যাচার ও নৃশংস গণহত্যা সত্ত্বেও দেশবাসীর মনোবল অটুট রহিয়াছে- অত্যাচার উৎপীড়ন শত্রর বিরুদ্ধে ঘৃনা ও প্রতিরোধের সংকল্পকে আরও সুদৃঢ় করিতেছে মাত্র। পক্ষান্তরে ইয়াহিয়ার দসু্য দলের সামনে খুন ও লুণ্ঠন ছাড়া কোন উদ্দেশ্য নাই- ইহাদের শৃঙ্খলা ও মনোবল একেবারে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে এবং শোচনীয় পরাজয় অবধারিত হইয়া উঠিয়াছে। প্রতিটি রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের হাতে মার খাইয়া ইহারা দিশাহারা হইয়া পালাইবার পথ পাইতেছেনা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রবর্গ, বিশ্ব কমিউনিষ্ট আন্দোলন এবং দুনিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তি বাংলাদেশের সমর্থনে ক্রমেই অধিক হইতে অধিকতর সোচ্চার ও সক্রিয় হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু ইহা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সামনে কোন সমস্যা নাই একথা বলা আত্মসন্তুষ্টি ও আত্মপ্রবঞ্চনার নামান্তর হইবে। এই সমস্যাগুলিকে গভীরভাবে উপলদ্ধি করা এবং উহাদের সমাধানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরী। সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করিয়া নয়, উহাদের যথাযথ সমাধানের মাধ্যমেই মুক্তিসংগ্রামকে দ্রুত চূড়ান্ত ও নিশ্চিত সাফল্যের পথে অগ্রসর করিয়া লওয়া সম্বব। বাংলাদেশের সংগ্রামী শক্তিগুলির সমবায়ে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠিত না হওয়ার দরুন যুদ্ধপ্রয়াসে যেসব বিঘ্ন সৃষ্টি হইতেছে, সে সম্পর্কে ইতিপুর্বে মুক্তিযুদ্ধে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হইয়াছে। মুক্তিফ্রন্ট গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে আওয়ামীলীগ দলীয় পরিষদ সদস্যবর্গ ছাড়াও যাহাতে অন্যান্য সংগ্রামী দলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সুপারিশ পত্র লইয়া মুক্তিফৌজের যোগ দেওয়া যায় উহার ব্যবস্থা অবিলম্বে করা দরকার। দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোপন সংগ্রাম কমিটিগুলি যাহাতে সকল সংগ্রামীদলের প্রতিনিধিদের লইয়া ঐক্যবদ্ধ সংগঠন হিসাবে গড়িয়া উঠিতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করা দরকার। বাংলাদেশের যে হাজার হাজার ছাত্র যুবক মুক্তি বাহিনীতে যোগদানের উদ্দেশ্যে আগাইয়া আসিতেছে তাহাদের ট্রেনিংয়ের সুযোগ সুবিধা আরও উন্নত ও সম্প্রসারিত করিতে হইবে এবং রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত কারনে কাহারও বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরন করা চলিবে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ইয়াহিয়া-চক্রকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়া সাহায্য করার যে নিলজ্জ নীতি অনুসরন করিয়া চলিয়াছে উহার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক নীতির পূর্ণমূল্যায়ন আবশ্যক। মানবতার নামে