পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

149 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড বিরাজ করিতেছিল (যা মুক্তিবাহিনীকে লোক সংগ্রহের ব্যাপারে দলীয় বাছবিচার, সামরিক অপারেশনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শক্তির কার্যক্রমের ব্যাপারে সমন্বয়ের অভাব প্রভৃতি) সংযুক্ত কমিটি গঠনের ফলে এখন সেগুলি দূরীভূত হইবে বলিয়া দেশবাসী প্রত্যাশা করেন। উচ্চ পর্যায়ের মত স্থানীয় কার্যকলাপের সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে নিচের স্তরের সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা দরকার। এবং সর্বোপরি যাহা দরকার তাহা হইল, প্রত্যেকেরই দলীয় সঙ্কীর্ণতা ত্যাগ করিয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বার্থকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া এবং সংগ্রামী শক্তিগুলির পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব গড়িয়া তোলা এখানে আমরা দেশবাসী সংগ্রামী শক্তিগুলির উদ্দেশ্য একটি সকর্তবানী উচ্চারিত করিতে চাই। সংযুক্ত কমিটি গঠনের ফলেই সংগ্রামী ঐক্যের সমস্যা দূরীভূত হইয়া গিয়াছে কিম্বা দলীয় সঙ্কীর্ণতা বা বিভেদ পন্থার শক্তি সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত হইয়াছে একথা মনে করা ভুল হইবে। বিভেদে ও শক্তি সম্পর্কে দেশবাসী ও সকল সংগ্রামী শক্তিকে সজাগ থাকিতে হইবে এবং ইহার বিরুদ্ধে লড়াই করিয়া ঐক্যের ভিত্তিকে মজবুত করিতে হইবে। গত ৮ই সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় বৈঠকে যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হইয়াছে সেগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উহাদের তাৎপর্যও সুদরপ্রসারী। এই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দলমত নির্বিশেষে সমগ্র জনগনে পূর্ণ আস্থার কথা পুনরায় ঘোষণা করা হইয়াছে। ইয়াহিয়া-চক্রের রুট চক্রান্ত ও বিভেদমূলক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সকল দলের এই সম্মিলিত ঘোষণা দেশে ও বিদেশে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করিবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে জিম্মি রাখিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা যেভাবে স্বাধীনতার দাবি ছাড়িয়া দিয়া আপোষ মীমাংসার জন্য চাপ সৃষ্টি করিতেছে উহার পটভূমিতে সর্বদলীয় বৈঠকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি ব্যতিত অন্য কোন ভিত্তিতে রাজনৈতিক মীমাংসা গ্রহণ যোগ্য নয়” বলিয়া সুস্পষ্ট প্রস্তাবও তাৎপর্যপূর্ণ। শেখ মুজিবকে আটক রাখিয়া ব্লাকমেলিং এর কোন প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ বরদাস্ত করিবেন না, এই প্রস্তাবের উহাই দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রকাশ পাইয়াছে শেখ মুজিবের গ্রেফতার ও বিচার প্রহসনের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার ধ্বনিত হইয়াছে সর্বদলীয় বৈঠকে । বাংলাদেশের সংগ্রাম যে ”পশ্চিম পকিস্তানীদের” বিরুদ্ধে নয়, সেখানকার একচেটিয়া ধনিক ও বৃহৎ সামন্ত ভুস্বামী-শ্রেণী এবং ইহাদের স্বার্থরক্ষক ইয়াহিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে এই সঠিক উপলব্ধির অভিব্যক্তিও দেখা গিয়াছে সর্বদলীয় বৈঠকের প্রস্তাবে।