পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

152 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় স্বাধীন বাংলা ১০ অক্টোবর, ১৯৭১ সোভিয়েত ভারত যুক্ত বৃিবতি ১ম বর্যঃ ১৪শ সংখ্যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাম্প্রতিক মস্কো সফল শেষে প্রকাশিত সোভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতিটি বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের গভীর ভ্রাতৃত্ববোধে ও দৃঢ় সমর্থনের পরিচায়ক। দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণ ইহাকে সঠিকভাবেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বপক্ষে একটি মস্তবড় ঘটনা হিসাবে গন্য করিয়াছেন এবং যুক্ত বিবৃতির প্রতি দ্ব্যর্থহীন অভিনন্দন জানাইয়াছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদও সোভিয়েত ভারত যুক্ত বিবৃতিতে সন্তোষ প্রকাশ করিয়া বলিয়াছেন যে, ইহার মধ্য দিয়া বাংলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে সোভিয়েত সরকারের গভীর উপলদ্ধির পরিচয় ফুটিয়া উঠিয়াছে। বাংলাদেশ সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের বরাত দিয়া কোন কোন স্বার্থসন্ধানী মহল সোভিয়েত-ভারত বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার হতাশ হইয়াছেন-এই মর্মে ইতিপুর্বে যে প্রচারনা চালাইয়াছিল বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র প্রকাশ্য বিবৃতি দ্বারা উহাকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় খণ্ডন করিয়াছেন। অবশ্য একথা ঠিক যে, সোভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতিতে প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কে কুটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা এবং স্বাধীনতা ছাড়া বাংলাদেশ সমস্যার আর কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান যে নাই তাহা স্পষ্ট বলা হয় নাই। কিন্তু ইহা হইতে একথা প্রমানীত হয় না যে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবির বিপক্ষে কিম্বা বাংলাদেশের উপর সোভিয়েত সরকার যেমন-তেমন ধরনের একটা রাজনৈতিক সমাধান চাপাইয়া দিতে চায়। বাস্তব অবস্থাও তাহা নয়। প্রথমত, সোভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতিতে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সমাধানের চরিত্র সুনিদিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। এই রাজনৈতিক সমাধানকে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা অনপহরনীয় অধিকার ও আইনসঙ্গত স্বার্থের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে। ভাষ্যকারদের মতে অনপহরনীয় অধিকার বলতে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারও বুঝায়। বিশেষত বাংলাদেশের জনগণ তথা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ এবং বাংলাদেশ সরকার ও সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ যখন অপরিবর্তনীয়রূপে ঘোষণা করিয়াছেন যে, পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধান তাহদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয় সেক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে মিমাংসা করিতে হইলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়াই উহা পদক্ষেপ নিয়াছে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ পরিস্কারভাবে সেগুলিকে উপেক্ষা করিয়াছেন। দ্বিতীয়, বাংলাদেশ সমস্যা ও ভারতে প্রায় এক কোটি উদ্বাস্তুর আশ্রয়গ্রহণ প্রভৃতির জন্য সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইসলামাবাদের জঙ্গশাহীকে দায়ী করিয়াছেন এবং শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানার্থে আয়োজিত ভোজসভায় সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কমরেড কোসিগিন ইয়াহিয়া-চক্রকেই এই অবস্থার প্রতিকারের উদ্দেশ্যে অবলিম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে বলিয়াছেন। ইয়াহিয়া-চক্র বিশ্ববাসীকে ধোকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় বেসামরিক “গভর্ণর” নিয়োগ, “সাধারন ক্ষমা” ঘোষণা প্রভৃতি যেসব পদক্ষেপ নিয়াছে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ পরিস্কারভাবে সেগুলিকে উপেক্ষা করিয়াছেন। তৃতীয়ত, সোভিয়েত ইউনিয়নের বাংলাদেশ সংক্রান্ত বক্তব্য বা দৃষ্টিভঙ্গ যে অনড়-অচল নয়, গত কয়েক মাসে উহার পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। এপ্রিল মাসে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান কমরেড পদগনি ইয়াহিয়া সরকারকে