পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

153 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ছিলেন। উহার মধ্য দিয়া বাংলাদেশের জনগণের জন্য গভীর সহানুভূতি প্রকাশ পাইলেও তখনকার তুলনায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্প্রতিক বক্তব্য অনেক বেশী সুনিদিষ্ট ও বাংলাদেশের পক্ষে আরও অনুকূল। এমনকি সহিত যুক্ত বিবৃতিকে মিলাইয়া দেখিলেও সোভিয়েত দৃষ্টিভঙ্গীর গতিশীলতার প্রমাণ পাওয়া যাইবে। গ্রোমিকো-শরণ সিং যুক্ত ইশতেহারেও বাংলাদেশে “পূর্ব পাকিস্তান” বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছিল। আলোচ্য যুক্ত বিবৃতিতে তদস্থলে পূর্ব বাঙলা “ব্যবহৃত হইয়াছে। যুক্ত ইশতেহারে” সারা পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলা হইয়াছে। সেখানে যুক্ত বিবৃতিতে পূর্ব বাংলার জনগণের ইচ্ছা, অনপহরনীয় অধিকার ও আইনসঙ্গত স্বার্থের” ভিত্তিতে সমাধানের কথা বলা হইয়াছে। কাজেই সোভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতির রাজনৈতিক সমাধানের প্রস্তাবকে যাহারা বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া বলিয়া প্রচারনা চালাইয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত বিরোধী জিগির তুলিতেছেন তাহারা হয় অন্ধ, না হয় মতলবাজ। সোভিয়েত ভারত যুক্ত বিবৃতি নিছক কথার কথা কিম্বা বাংলাদেশের প্রতি লোক দেখান সহানুভূতি নয়। জাতিসংঘে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইয়াহিয়া-চক্রের প্রতি ধিক্কার জানাইয়া বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমতকে সংগঠিত করিতেছে। সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী মস্কোতে সাংবাদিকদের নিকট খোলাখলিভাবে যাহা বলিয়াছিলেন (“আমাদের সহানুভূতি পর্ব বাংলার নিপীড়িত জনগণের প্রতি, উৎপীরকের প্রতি নয়”) জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে উহার সহিত সঙ্গতিপুন বাস্তব কার্যক্রম দেখা যাইতছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মুক্তির যে দাবী যুক্ত বিবৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করিয়াছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন সে দাবীতে বিশ্বজনমত গড়িয়া তুলিতেছে। সোভিয়েতের বিভিন্ন সংগঠন যথা শান্তি পরিষদ, ট্রেড ইউনিয়ন, আফ্রো-এশীয় সংহতি পরিষদ , সাংবাদিক ইউনিয়ন, মহিলা সংস্থা প্রভৃতি গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের প্রতি সংহতি জানাইয়া যেসব বিবৃতি প্রকাশ করিয়াছে উহা তাৎপর্ষহীন নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন আজ নয়, একেবারে প্রথম হইতে এবং দৃঢ়চিত্তভাবে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতি ও সৌভ্রাতৃত্ব প্রকাশ করিয়া আসিয়াছে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে যখন একমাত্র ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশ বাংলাদশে সম্পর্কে মাথা ঘামাইয়বার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে নাইতখনই সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্রপ্রধানের আবেদন জ্ঞাপনের ন্যায় সর্বোচ্চ কুটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ সাম্রাজ্যবাদীদের সহিত এক করিয়া প্রচার করে তাহদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলিয়া পারা যায় না। পাক-ভারত যুদ্ধের আশঙ্কা প্রহিতহত করিয়া বিশ্বের এই এলাকায় শান্তি অব্যাহত রাখার প্রশ্নটি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শান্তি অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারে শুধু যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত আগ্রহী তাহা নয়, বংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থের ইহা প্রয়োজন। পাক-ভারত যুদ্ধ বাধাইয়া জাতিসংঘ মারফত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদিগকে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেওয়া এবং বাংলাদেশ প্রশ্ন হইতে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি পাক-ভারত বিরোধের প্রতি সরাইয়া নেওয়ার উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া চক্রই কেবল পাকভারত যুদ্ধ বাধাইতে আগ্রহী হইতে পারে। বস্তুত পাকিস্তানী শাসকচক্র মুক্তিবাহিনীর হাতে ক্রমাগত মার খাইয়া পাক-ভারত যুদ্ধ বাধাইবার ফিকিরই খুজিতেছে। কাজেই যুক্ত বিবৃতিতে যুদ্ধ প্রতিহত করিয়া শান্তি রক্ষার যে কথা বলা হইয়াছে উহা বাংলাদেশের স্বার্থের সাহিত সম্পূর্ন সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশের দুই অকৃত্রিম সুহৃদ ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের অনুকূলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সৃষ্টি করিতেছে। ভারত-সোভিয়েত যুক্ত বিবৃতি এই ফলপ্রসু সহযোগিতারই একটি অমূল্য দলিল। আমরা ইহাকে মুক্তকষ্ঠে অভিনন্দন জানাইতেছি।