পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

165 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ রাজনৈতিক হালচাল মুক্তিযুদ্ধ ২১ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্যঃ ২০শ সংখ্যা রাজনৈতিক হালচাল (ভায্যকার) বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। ছোট ছোট মুক্তাঞ্চল গড়িয়া উঠিয়াছে বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া গ্রাম এলাকায় পাক হানাদর বাহিনীর তৎপরতা খুবই সীমাবদ্ধ রাজাকার ও পশ্চিম পাকিস্তান হইতে আমদানী করা পুলিশও মুক্তি বাহিনী ও গেরিলাদের অতর্কিত আক্রমনের ভয়ে থানার সদর কার্যালয় ছাড়িয়া দুরে যাইতেসাহস পায় না। ফলে বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলও কার্যত মুক্ত। সেখানে ইয়াহিয়া খান কিম্বা তাহার পা-চাটা মালেকের তথাকথিত সরকার শাসন নাই বলিলেও চলে। বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিবাহিনী, স্থানীয়ভাবে সংগঠিত আওয়ামীলীগ, ন্যাপ বা কমিউনিষ্ট সমর্থক গেরিলা বাহিনী এবং স্থানীয় মুক্তিসংগ্রাম কমিটি (যা বহুক্ষেত্রে উপদেষ্টা কমিটির ধরনে সর্বদলীয় গড়িয়া উঠিয়াছে) প্রভৃতির হাতেই এই সব এলাকার কর্তৃত্ব কার্যত ন্যাস্ত। এই সব মুক্তাঞ্চলে অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করার জরুরী তাগিদ আজ অনুভূত হইতে শুরু করিয়াছে। আবার, মুক্ত এলাকার প্রশাসন বা পুর্গঠনের প্রশ্নকে কেন্দ্র করিয়া একটি বড় ও মৌলিক প্রশ্ন সামনে চলিয়া আসিয়াছে। প্রশ্নটি হইল বাংলাদেশ সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনগঠনের ক্ষেত্রে কোন নীতি, কোন পথ অনুসরণ করিবে? মুক্ত এলাকার সমস্যা সমাধান আলাদাভাবে হইতে পারে না। গোটা বাংলাদেশের পুনর্গঠনের প্রশ্নের সহিত ইহা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজিকার ছোট ছোট মুক্তাঞ্চলগুলিকে গড়িয়া তুলিতে হইবে আগামী দিনের বাংলাদেশের মডেল হিসাবে তাই মুক্তাঞ্চলের পূর্ণর্গঠনের প্রশ্নকে সামনে রাখিয়া আজ বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য সকল সংগ্রামী শক্তিকে দেশের ভবিষ্যৎ সামাজিক অর্থনৈতিক রূপরেখা সম্বন্ধে চিন্তা করিতে হইবে। ইহা এখন আর নিছক তত্ত্বগত বিষয় নয়, ভবিষ্যতের জন্য ইহাকে ফেলিয়া রাখাও চলে না। স্বাধীন বাংলাদেশের সম্পর্কে অস্পষ্টভাবে হইলেও একটা ধারনা বা ছবি সকলের মনেই আছে ইহার প্রকাশও নানভাবেই দেখা যাইতেছে। স্বাধীনতার দাবিতে বাংলাদেশেল সব মানুষ এক পশ্চিম পাকিস্তানের কুখ্যাত বাইশটি একচেটিয়া পুজিপতি পরিবার, বড় জমিদার গোষ্ঠী ও উহাদের মুরী সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলাদেশের উপর যে এক ধরনের ঔপনিবেশিক শাসন শোষনের জোয়াল চাপাইয়া দিয়াছিল, উহা হইতে মুক্তি চায় প্রতিটি নরনারী এই একচেটিয়া শোষন বজায় রাখার উদ্দেশ্যে উহার যে নিষ্ঠুর সামরিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম করিয়াছিল উহাকে ধ্বংস করিয়া জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর সকল স্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। প্রতিটি দেশবাসী চায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং উক্ত দাবিতে প্রত্যেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করিতেছে। কিন্তু ইহার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, বাংলাদেশে সকল শ্রেণী ভেদাভেদ লুপ্ত হইয়া গিয়াছে কিম্বা শ্রেণী স্বার্থের বৈপরীত্য লোপ পাইয়াছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ছবিও সকল শ্রেণীর মানুষের মনে এক রকম নয় কৃষক ভাবিতেছে স্বাধীন বাংলাদেশে সে জমি পাইবে, সামন্তবাদী শোষনের নাগপাশ হইতে পাইবে মুক্তি। শ্রমিক ভাবিতেছে সে পাইবে বাঁচার মত মজুরী, কাজের নিরাপত্তা রাজনৈতিক ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার। যুগ যুগ ধরিয়া সে সভ্যতার পিলসুজ হইয়া কাটাইয়াছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়া এমন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলিয়া যাইবে যেখানে সে সভ্যতার নির্মাতা হিসাবে উহার ফল ভোগেরও অধিকারী হইবে।