পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

166 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সকলের অন্ন বস্ত্র শিক্ষা স্বাস্থ্য আশ্রয়ের মত নু্যনতম চাহিদাগুলি মিটিবে। মধ্যবিত্ত ভাবিতেছে স্বাধীন বাংলাদেশে তাহার শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থাহবে, বেকারত্ব ঘুচিবে, জীবন মানের উন্নতি হইবে। বাঙালী ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের মনে রহিয়াছে পশ্চিম পাকিস্তানী এক চেটিয়া পুঁজির অসম প্রতিযোগিতার অবসান ঘটাইয়া আত্মবিকাশের আকাঙ্খা। ইহাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার আদমজী-ইস্পাহানী-দাউদ-বাওয়ানীকে তাড়াইয়া নিজেরাই যে বাঙালী আদমজী-দাউদ-বাওয়ানী হইয়া বসিবার স্বপ্ন দেখিতেছিনা তাও নয়। এখন প্রশ্ন হইল, স্বাধীন বাংলাদেশে কোন শ্রেণীর মানুষের স্বপ্ন সফল হইবে? শোষক শ্রেণীর না শোষিত শ্রেণীর? যে শ্রমিক কৃষক-ছাত্র জনতা স্বাধীনাতর জন্য বুকের রক্ত ঢালিতেছে তাহদের শোষণ মুক্তির পথ উম্মোচিত করা হইবে, না মুষ্টিমেয় ধনিকের শোষনের অধিকার কায়েম করা হইবে। বাঙালী উদীয়মান ধনিকশ্রেণীর স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে-পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুজির বিরুদ্ধে ইহারা অতীতেও লড়াই করিয়াছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে ইহারা মিত্র শ্রেণীভুক্ত। তাহা সত্ত্বেও একথা মনে রাখিতে হইবে যে, ইহাদের শ্রেণী চরিত্র শোষকের কাজেই স্বাধীন বাংলাদেশে ইহাদিগকে যদি অবাধ বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয় শ্রেণীগুলি অর্থাৎ শ্রমিক কৃষক বুদ্ধিজীবি তথা সকল মেহনতী মানুষ শোষনের জোয়ালে আবদ্ধই থাকিয়া যাইবে। শোষকের পরিবর্তন হইলেও শোষনের অবসান ঘটিবেনা। তাছাড়া পুজিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হইলে যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আজ ইয়াহিয়া চক্রকে অস্ত্র অর্থ উপদেষ্টা দিয়া বাংলার নরমেধযজ্ঞে সহায়তা করিতেছে, সাহায্য ঋন ও বিশেষজ্ঞের জন্য উহাদিগকেই স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকিয়া আনিতে হইবে। সাম্রাজ্যবাদী শোষণের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িবে বাংলদেশ। সোনার বাংলা আরও রিক্ত, আরও কঙ্কালসার ইহয়া পড়িবে। ইহার বিকল্প কি? ইহার বিকল্প রাস্তা হইল পুঁজিবাদী পথ পরিহার করা শুধু শোষক পরিবর্তন নয়, শোষনমূলক ব্যবস্থারই চির অবসানের দিকে পদক্ষেপ নেওয়া। শোষিত নিপীড়িতের রাজ কায়েম করা। ইহার অর্থ এই নয় যে, পুঁজিপতিদের গলা কাটিয়া ফেলা হউক কিম্বা যে লোক আন্ডা বেচিয়া খায় তাহার মুরগীটিকে জাতীয়করন করিয়া লওয়া হউক। বাংলাদেশের সামাজিক বিকাশের বর্তমান স্তরে বেসরকারী উদ্যোগের ইতিবাচক ভূমিকা শেষ হইয়া যায় নাই। কাজেই বেসরকারী পুঁজি বা উদ্যোগকে সম্পূর্ণরূপে নাকচ করার প্রশ্ন আসে না। কিন্তু এই পুঁজিকে জনসাধারনের উপর অবাধ শোষণ চালাইয়া একচেটিয়া পুঁজিতে পরিনত হইতে দেয়া চলিবে না। রাষ্ট্রায়ত্ব খাতকে জাতীয় অর্থনীতির নিয়ামক শক্তিরূপে গড়িয়া তুলিতে হবে। ব্যাংক, বীমা বৃহৎ শিল্প, পাট শিল্প ও পাট ব্যবসা, আমদানী রপ্তানী ব্যবসা প্রভৃতি জাতীয়করন করিয়া রাষ্ট্রায়ত্ত বা সরকারী খাতকে শক্তিশালী করিতে হইবে। সরকারী খাতের পরিচালনা ব্যবস্থার গণতান্ত্রিকীকরন, পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অংশ গ্রহনের নিশ্চয়তা বিধান এবং সরকারী খাতের দক্ষতা বৃদ্ধির ও ব্যবস্থা করিবে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠায়। অর্থনৈতিক পুনগঠনেও একটি প্রধান কাজ হইল, ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার তথা কৃষির পুনর্গঠন বাংলাদেশে ভূমি সংস্কারের প্রশ্নটিকে দীর্ঘদিন যাবৎ ফেলিয়া রাখা হইয়াছে। ১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ হইলেও জমিদারী উচ্ছেদ হয় নাই।