পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

169 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ মুক্তাঞ্চলে নতুন জীবন মুক্তিযুদ্ধ ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ গড়িতে হইবে ১ম বর্ষঃ ২২শ সংখ্যা মুক্তাঞ্চলে নতুন জীবন গড়িতে হইবে (নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির অনেক অঞ্চল মুক্ত হইয়াছে। নতুন নতুন এলাকা মুক্ত হইতেছে। মুক্তাঞ্চলের মানুষ দখলদার শত্রসেনাদের কবলমুক্ত হইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিতেছেন এবং মাতৃভূমির বাকি অংশ মুক্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনীর সহিত পূর্ণ সহযোগিতা করিতেছেন। কিন্তু এই সঙ্গে মুক্তাঞ্চলে দেখা দিয়াছে অনেক জটিল সমস্যা। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলির পুনর্গঠন, জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠ প্রশাসন গড়িয়া তোলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ জরুরী হইয়া দেখা দিয়াছে। আমাদের প্রতিনিধি সম্প্রতি রংপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, পাটগ্রাম ইত্যাদি মুক্তাঞ্চল পরিভ্রমণ করিয়া এই সলক সমস্যার কথা জানাইয়াছেন। পাক বাহিনীর পোড়ামাটি নীতি সর্বত্রই পিছু হটার সময় পাক বাহিনী পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করিয়া সব কিছু জ্বালাইয়া পোড়াইয়া ধ্বংস করিয়া দিতেছে। মুক্তি বাহিনীর অগ্রগতির মুখে ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী থানা ত্যাগ করার সময় হানাদার শয়তানরা গ্রামবাসীদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি চালাইয়া তিন শতাধিক লোককে হত্যা করে, বহু বাড়িঘর জুলাইয়া দেয়, এমন কি পেট্রোল দিয়া জমির পাকা ধানে আগুন ধরাইয়া দেয়। কয়েকটি সড়ক সেতুও পাক সেনারা যাইবার সময় ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। নিজদলীয় রাজাকারদেরও পাক সেনারা গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে। এইভাবে শত্রসেনারা পূর্ব দখলকৃত গ্রামগুলিকে যাইবার সময় শ্মশানে পরিণত করিয়াছে। মুক্তাঞ্চলে খাদ্যও নাই। মুক্তাঞ্চলের জনগণকে বাঁচাইবার জন্য এখনই জরুরী ভিত্তিতে রিলিফের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যাহাদের ঘরবাড়ি নাই তাহাদের পুনর্বাসনের জন্য ঘর তুলিয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। খাদ্য, ঔষধপত্র ও চিকিৎসকের তীব্র অভাব রহিয়াছে। অর্থনীতি মুক্তাঞ্চলগুলি অর্থনৈতিক দিকে হইতে কার্যত বন্ধ এলাকায় পরিণত হইয়াছে। স্বাভাবিক ব্যবসা-বানিজ্য নাই। এই সকল অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য পূর্বে দখলকৃত এলাকার সহিত মুক্ত থাকায় এখন সরবরাহের ক্ষেত্রে দারুণ উচ্চমূল্য। লবণ, কেরোসিন, দেশলাই, আটা, চিনি ইত্যাদি প্রায় পাওয়াই যায় না। লবণ প্রতি সের কোথাও কোথাও ৫ টাকা ও কেরোসিন ৮ টাকায় বিক্রয় হইতেছে। গরীব, ক্ষেত মজুর দিনমজুর ও সাধারণ কৃষকের এইগুলি ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এই শ্রেণীর জনগণের হাতে এখন কোন কাজও নাই। এই সকল এলাকায় প্রধান অর্থকরী ফসল পাট ও তামাক যাহাদের কিছু আছে তাহারাও দাম পাইতেছে না। বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রতিবেশী ও মিত্র ভারতের সহিত আলাপ আলোচনা করিয়া ভারত ও মুক্তাঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা –