পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

190 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড মিসেস জগল বলেন যে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়ানার উচিত শাস্তিকামী দেশগুলোর সাথে এক হয়ে রাজনৈতিক সমাধান ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত পাকিস্তানী নেতাদের হাতে শাসনক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দৃষ্টি করা। বিশ্ব শান্তি পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক উ থান্টের কাছে এক স্মারকলিপিতে এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশ সমস্যার একটা রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব, যদি তা নিয়ে জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণে তাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের ভিত্তিতে আলোচনা করা হয়। ৯ই সেপ্টেম্বর নিউইয়কে পরিষদের মহাসচিব শ্রী রমেশচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন পরিষদের এক প্রতিনিধি দল এবং সমস্ত মহাদেশের অন্যান্য প্রতিনিধিরা উ থান্টের হাতে স্মারকলিপিটি অর্পণ করেন। স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র অসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হারে হত্যা করার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের জনগণের ক্রমবর্ধমনা প্রতিরোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি পরিষদের সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়েছে। নেপালস্থ পূর্ববঙ্গ শরণার্থী সহায়ক কমিটি এক প্রস্তাবে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে বাংলাদেশের শাসনভার তুলে দেবার দাবী জানিয়েছে। কারণ এই ব্যবস্থার দ্বারাই শরণার্থীদের আবার স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আর এক প্রস্তাবে বাংলাদেশে পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর বর্বরতার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। নেপালের খ্যাতনামা নেতারা এই সভায় যোগ দেন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অকুষ্ঠ সমর্থন জানান। প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্ৰী ঋষিকেশ শাহা এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ সহায়ক তহবিলে ডাঃ কামার্জি একশত টাকা দিয়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু করান। যে ঘটনায় কোন দেশের ৮০ লক্ষ মানুষকে পররাষ্ট্রে আশ্রয়ের জন্য চলে যেতে হয় আর সে দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা বলা যায় না। ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক জন কেনেথ গলব্রেথ এক সংবাদিক বৈঠকে বলেন, পূর্ববঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি আর ভারতে শরণার্থী আসার ঘটনাকে ভিন্ন করে দেখা যায় না। অধ্যাপক গলব্রেথ বলেন, তাঁর ভারত সফর পুরোপুরি বেসরকারী। এর সঙ্গে কুটনৈতিক গুরুত্ব আরোপ করা ঠিক হয়। নিজের সফর সম্পর্কে তিনি বলেছেন, একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এসেছেন ভালোভাবে শরণার্থী সমস্যা অনুধাবন করতে। বাংলাদেশে পাকিস্তানের ভূমিকা সম্পর্কে পর পর কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নতুন কোন ফ্রন্ট’ খোলার উদ্দেশ্যে তিনি ভারতে আসেন নি তবে তিনি বলেছেন, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গে শাসন চালাবার চেষ্টা করলে পাকিস্তানের অর্থনীতির শোচনীয় পরিস্থিতি হবে। শেখ মুজিব সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শেখ মুজিব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর বিচারকে গণতান্ত্রিক বলে চালানো হলে গণতন্ত্রের ওপর মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। অধ্যাপক গলব্রেথ বলেন, তাঁর ধারণা, নিরাপত্তা বোধ করলে শরণার্থীরা দেশে ফিরে যাবেন। তাঁর মতে নিরাপত্তার ভাব তখনই ফিরে আসবে যখন তাঁরা নিজেদের শাসনের অধিকার হাতে পাবে এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তিনি জানান, তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, হাইকমিশনার ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্তে এসেছেন।