পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

200 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বিপ্লবী বাংলাদেশ* ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ জনযুদ্ধের জনশিক্ষা ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা সম্পাদকীয় জনযুদ্ধের দুটি দিক আছে। একটি হলো যারা সরাসরি লড়াই করবে, অর্থাৎ কম্বাট ফোর্স বা কমাণ্ডো’ । সংখ্যায় তারা জনগণের সামান্য অংশ। আর জনগণের বৃহদাংশ হলো মোটিভেশনাল আর্মি। তারা জনগণকে বিপ্লব সম্বন্ধে সচেতন রাখে, জনগণের মনোভাব অবিচল রাখতে সাহায্য করে, শত্রপক্ষকে ভুল বোঝায়, শত্ৰপক্ষ সম্বন্ধে তথ্য জোগাড় করে, এবং সর্বোপরি, কম্যাণ্ডোরা যাতে সবরকম সাহায্য পায় তার চেষ্টা করে। এইসব কাজকর্মের মধ্য দিয়া মোটিভেশনাল আর্মি জনগণের বিপ্লবী মনোভাব গড়ে তোলে। ফলে বিপ্লবের কাজ আরও দ্রুততর হয়। আর মোটিভেশনাল আর্মির কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে এগোতে থাকে কম্যাণ্ডোদের যুদ্ধ এবং অন্তর্ঘাতমূলক ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জনযুদ্ধের তথা মুক্তিযুদ্ধেরও এই দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে কম্যাণ্ডো অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধারা ; অপরটি হচ্ছে জনগণের বাকি অংশ অর্থাৎ মোটিভেশনাল আর্মি। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য হাসিমুখে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে। কিন্তু এসবই বিফল হবে, যদি জনগণ প্রস্তুত না হয়। আর এই প্রস্তুতির জন্যই চাই মোটিভেশনাল আর্মি । মোটিভেশনাল আর্মি কারা, এবং তাদের ঠিক কি কি করতে হবে ? মোটিভেশনাল আমি কে বলা যায় প্রস্তুতি বাহিনী। তাদের মোটামুটি কাজ হলো জনগণকে প্রস্তুত করা। এই প্রস্তুতি বাহিনী গঠন করতে হবে আমাদের মধ্য থেকেই। এত আপনিও আছেন, আমিও আছি, সমগ্র বাংলাদেশ আছে। মোটিভেশনাল আর্মি তৈরি করা এবং তার কার্যপদ্ধতির কিছু কিছু অংশ এখানে দেওয়া হলো। এগুলির মধ্যে আপনি যা যা করতে পারেন সেগুলি করতে আরম্ভ করুন। মোটিভেশনাল আর্মি বা প্রস্তুতি বাহিনীর গোড়াপত্তন হবে তাদের দ্বারাই যারা ব্যক্তিগত জীবনে সৎ ও আদর্শবাদী হবে এবং হাজার বিপদের ভেঙ্গে পড়বে না। প্রস্তুতি বাহিনীর মনোবল খুবই বেশী হওয়া আবশ্যক, কারণ তারাই সাধারণ লোকদের সাহস যোগাবে। প্রস্তুতি বাহিনীর প্রশাসন সম্বন্ধেও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, যেহেতু অনেক সময়েই হয়তো তাদের ওপর প্রশাসনের দায়িত্ব পড়বে। তাদের হতে হবে কষ্টসহিষ্ণু এবং জনগণের সঙ্গে মিলে যাবার গুণ থাকা দরকার। সর্বোপরি তাদের থাকবে চারিত্রিক দৃঢ়তা, সেবাপরায়ণতা এবং সাবধানতা ও গোপনীয়তা অবলম্বন করার ক্ষমতা। এই প্রস্তুতি বাহিনীর সামনে তিনটি দায়িত্ব রয়েছে। প্রথমতঃ প্রস্তুতি, দ্বিতীয়ঃ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা এবং তৃতীয়তঃ সংযোগ ও সংবাদ সরবরাহ করা। প্রথমে জনপ্রস্তুতি সম্বন্ধে আলোচনা করা যাক। জনপ্রস্তুতি বলতে আর কিছুই নয়, মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব ও দায়িত্ব সম্বন্ধে জনগণকে ওয়াকিফহাল করে তোলা। তাদের বোঝানো যে এ লড়াই তাদের মুক্তির লড়াই। মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য হবে জনগণেরই সাফল্য। তাই বাংলাদেশের একমাত্র উপায় হলো মুক্তি সংগ্রামীদের সর্বপ্রকারের সহায়তা করা। তাছাড়া জনগণের দেশপ্রেম

  • বিপ্লবী বাংলাদেশঃ বরিশাল হতে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক রফিক হায়দার কর্তৃক চাঁপা প্রেস হতে মুদ্রিত ও সম্পাদক নুরুল আলম কর্তৃক প্রকাশিত।