পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

202 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বিপ্লবী বাংলাদেশ ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ১ম বর্ষঃ ৫ম সংখ্যা সম্পাদকীয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রস্তুতি বাহিনীর কর্তব্য ও ভূমিকা সম্বন্ধে আগেই বলা হয়েছে। এবার তাদের কর্তব্যগুলো তারা কিভাবে পালন করবে তা জানা দরকার। কিন্তু এটা জানবার আগে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশে গেরিলা-পদ্ধতির গুরুত্ব এবং প্রয়োজন কতোখানি। গেরিলা-যুদ্ধের সবচেয়ে দরকারী তিনটি বিষয় হলো সমগ্র জনগণের যুদ্ধে সাহায্য করা, লড়াইয়ের সঠিক স্থান ও কৌশল নির্বাচন করা এবং দীর্ঘদিন ধরে সর্বদাই একটু একটু করে শত্রুনিধন করা। এই তিনটি বিষয়ের একটু আলোচনা করে দেখা যাক। প্রথমে দেখা যাক সমগ্র জনগণকে যুদ্ধে সাহায্য করানোর ব্যাপারটা। এটা জানা দরকার যে, গেরিলা লড়াইয়ের মতো জনসমর্থনের প্রয়োজন আর কোনও যুদ্ধে হয় না। সাধারণতঃ যুদ্ধে সৈন্যবাহিনী লড়াই করে চলে, এবং জনসাধারণ তাদের জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিকভাবে চালাতে থাকে। কিন্তু গেরিলা যুদ্ধে প্রত্যেককেই অংশগ্রহণ করতে হয়। ভিয়েতনামে দেখা গেছে যে হয়তো কখনও মা বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে, কখননো বা সে ক্ষেতে চাষ করছে, আবার কখনো বা শত্রপক্ষের গতিবিধি ক্ষমতা মনোভাব ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করছে, এমনকি প্রয়োজনে বন্দুকও ঘাড়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধে এই অবস্থানই ঘটেছে। বর্বর পাক সৈন্য ভেবেছিল যে পাশবিক অত্যাচারের দ্বারা বাঙালীর মুখ বন্ধ করে রাখবে। কিন্তু বিগত ২৪ বছর একটানা পশ্চিমী শোষণের মুখোশ আজ খসে পড়ছে। তাই প্রত্যহ দলে দলে জনসাধারণ মুক্তিফৌজে যোগদান করছে। এই রকম অসাধারণ জনসমর্থনই গেরিলা যুদ্ধে প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে লড়াইয়ের সঠিক স্থান এবং কৌশল স্থির করা আবশ্যক। গেরিলা লড়াইয়ে যে ধরনের স্থানের প্রয়োজন তা বাংলাদেশে যথেষ্ট রয়েছে। এইসব স্থান হলো জঙ্গল, পাহাড়, খাল-বিলওয়ালা অঞ্চল, ইত্যাদি। এগুলোর সঠিক ব্যবহারের ফলে মুক্তিফৌজ ক্রমাগত জয়ের পথে এগিয়ে চলছে। সেই সঙ্গে যখন যেরকম কৌশল কাজে লাগানো যায়, সেরকম কৌশল নেওয়া হচ্ছে। আর তৃতীয় বিষয় হলো দীর্ঘদিন ধরে সর্বদাই একটু একটু করে শত্রর ক্ষতি ঘটিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারটা অত্যন্ত জটিল। কারণ, সাধারণত যুদ্ধে দেখা যায় যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধের মীমাংসা করার চেষ্টা করা হয়; যেহেতু, দিনের পর দিন সৈন্যবাহিনীর রসদ অস্ত্র-শক্রযোগান দিয়ে ওঠা অত্যন্ত কষ্টকর। কিন্তু গেরিলারা জনগণেরই অংশ-তাই তাদের রসদের অভাব হয় না। সমস্ত জনগণ মুক্তিফৌজের প্রয়োজনীয় রসদ জোগাড় করে দেয়। বাংলাদেশের জনগণও আজ তাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে মুক্তিফৌজের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সবারই একমাত্র প্রতিজ্ঞা-বাংলা মা কে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করবো।