পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

204 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ইংরেজী ভাষায় revolution মানে পরিবর্তন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে কোন পরিবর্তনকেই কি বিপ্লব বলা চলে? একটি গভর্ণমেন্টের পরিবর্তন বা মন্ত্রীদলের পরিবর্তনকে কি বিপ্লব বলব? পাকিস্তানের আইয়ুব খাঁর গদি পরিবর্তনকে কি বিপ্লব বলব? না, এসব বিপ্লব নয়। কারণ এতে জাতীয় জীবনধারার পরিবর্তন ঘটে না। জাতীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনের গণমুখী পরিবর্তন ঘটে না। আইয়ুব খাঁ জনগণের দেওয়া চাকুরী, অস্ত্রশস্ত্র, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে গড়া সৈন্যবাহিনীকে অপব্যবহার করেছে নিজের এবং শোষক দুনীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী ও সরকারী কর্মচারীদের স্বার্থে। জাতীয় জীবনে গণমুখী মূলগত পরিবর্তন ঘটেনি। বিপ্লবের ফলে যে পরিবর্তন আসে তা মূলগত পরিবর্তন। জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, চারিত্রিক অস্ত্র ধারণ করে বিপ্লবের পথে সমস্ত বাধাকে ধ্বংস করে এগিয়ে যেতে হবে - শোষনের সমস্ত উৎস মুখ ধ্বংস করতে হবে জাতীয় শত্রদের নির্মুল করতে হবে। সেই জন্যেই রক্তপাত বিপ্লবের একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। সামান্য ২/৪টি নগণ্য পরিবর্তনকে বিপ্লব বলা চলে না। বাংলার মানুষ স্বাভাবিক পথে বাঁচতে চেয়েছিল - চেয়েছিল নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে শোষণঅত্যাচার-অবিচার জুলুমের হাত থেকে রেহাই পেতে। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তান সরকার এবং তাদের তল্পিবাহক দালালেরা বারবার সে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের পথে বিভিন্ন কায়দায় বাধার সৃষ্টি করেছে এবং নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে সংগ্রাম বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। তাই বাংলার জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি এবং শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা গঠনের জন্য অস্ত্র হাতে গর্জে উঠতে বাঙালীরা বাধ্য হয়েছে। দেশীয় শাসকবর্গের বিরুদ্ধে বিপ্লব সৃষ্টি করে নতুন সমাজ ব্যবস্থার জন্য বিপ্লব করা অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ কিন্তু প্রথমে বিদেশী শক্তিকে অপসারিত করা এবং তারপর নতুনতর সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি করা সত্যিই আরও কঠিন কাজ। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখে তাই আজ কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। প্রথমতঃ বিদেশী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করা, দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশের বঞ্চিত অবহেলিত মানুযের জন্যে শোষণহীন সমাজব্যবস্থার সৃষ্টি করা।