পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

205 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বিপ্লবী বাংলাদেশ ১০ অক্টোবর, ১৯৭১ অবরোধ ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্য সম্পাদকীয় অবরোধ মুক্তিযুদ্ধের জনপ্রস্তুতি যেমন বিশাল হওয়া দরকার, তেমনি দরকার জনগণকে বিপ্লবের মূল তথ্যটা বোঝানো সব দেশের মুক্তিযুদ্ধ একইভাবে পরিচালিত হয় না। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে মুক্তিযুদ্ধের চেহারা পাল্টায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও তার নিজস্ব কায়দায় চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। এটার গোড়াপত্তন হয়েছিল গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যারা নির্বাচনে জয়ী হলেন, তাঁদের সরকার তৈরীর সুযোগ দেওয়া হলো না। উপরন্তু, সামরিক শাসনকর্তারা সৈন্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে দমাতে গেলেন। ফলে রাতারাতি গণতান্ত্রিক বিপ্লব পরিবর্তিত হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধে। কাজেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অন্যান্য দেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। যখন গণতান্ত্রিক বিপ্লব রুপান্তরিত হয়ে গেল সশস্ত্র বিপ্লবে, তখন প্রথম প্রয়োজন ছিল আত্মরক্ষা করার। কারণ, মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলবার জন্য লোক, অস্ত্র, রসদ, আশ্রয় ইত্যাদি প্রয়োজন। এখন মুক্তিবাহিনী এক সুসংগঠিত বাহিনী হয়ে উঠেছে। তাই এবার চলেছে প্রত্যাঘাতের পালা। এই প্রত্যাঘাত করবার দুটি পথ আছে। প্রথমতঃ সরাসরি যুদ্ধ ও অন্তর্ঘাত, দ্বিতীয়তঃ অবরোধ ও অসহযোগ। যুদ্ধ, অন্তর্ঘাত ও অসহযোগ সম্বন্ধে প্রায় সবারই কিছু ধারণা আছে। কিন্তু অবরোধই হবে বাংলাদেশের বিপ্লবের প্রধানতম অস্ত্র এবং অবরোধের পর্ব ও বিভিন্ন কৌশল সবাইকে জানতে হবে। শেখ মুজিব একবার বলেছিলেন, আমরা ওদের ভাতে মারবো, আমরা ওদের পানিতে মারবো। সম্ভবতঃ কেউ ধারনাই করতে পারেনি যে কয়েক মাস পরেই এই কথাটি এক চরম সত্য হয়ে দাঁড়াবে। সাধারণ যুদ্ধে যে অবরোধ সৃষ্টি করা হয় তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অবরোধ সৃষ্টির এক মূলগত অভ্যাস আছে তা হলো সাধারণ যুদ্ধে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু দখলকারী সৈন্যের বিরুদ্ধে চালানো হয়, সেহেতু মুক্তিযোদ্ধারা সমগ্র দেশ জুড়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ অবরোধের মূল লক্ষ্য হলো শত্রকে রসদ জোগাড়ের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া। এই অবরোধে শত্রকে শুধু ঘিরে রাখাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন হয় রাস্তা ওড়ানোর, ব্রীজ ভাঙ্গার, বন্দর আক্রমন করার, এবং সর্বোপরি বিমান চলাচল ব্যাহত করার। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে এই সব পদ্ধতি সফলভাবে অনুসৃত হচ্ছে। তা ছাড়া অবরোধের সাথে অসহযোগ চালানো দরকার। বাংলাদেশের ধান, পাট, ইত্যাদি কৃষিজ দ্রব্য যার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠেছে- সেগুলো যাতে পাক হানাদারেদের হাতে কিছুতেই না পড়ে তার জন্য সতর্ক থাকা দরকার। চাষী ভাইদের চেষ্টা করতে হবে যাতে তারা ধান, পাট ইত্যাদি কৃষিজ দ্রব্য মুক্তাঞ্চলে মুক্তিফৌজের কাছে পৌছে দিতে পারেন। এ কাজে তারা মুক্তিফৌজের সহায়তা পাবেন।