পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

211 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে এসব খবর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে যে এই সামান্য ” খবরগুলো পেলেই মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যর একটা ছাউনী আক্রমণ করতে পারে। শহরের বাসিন্দাদের পক্ষে তথ্য সংগ্রহের কাজটা এতো সহজ নয়। তাদের জানতে হবে প্রতিটি অস্ত্রের পরিচয় ও ক্ষমতা। এর কারণটা খুবই সহজ। গেরিলাদের বারবার আক্রমণে পাকসৈন্য উত্ত্যক্ত হয়ে উঠলে হয়তো তারা ভারী অস্ত্র এনে গেরিলাদের গোপন-ঘাঁটিসহ একটা বসতি অঞ্চল ধ্বংস করে দিতে পারে। কাজেই শহর অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহকারীকে জানতে হবে, ঠিক কোন অস্ত্রের সাহায্যে বাড়িগুলো ধ্বংস করে দেয়া যায়। এবং তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে হানাদার সৈন্যরা ঐ ধরনের কোন অস্ত্র সমবেশ করছে কিনা। আর যদি তা না করে, তাহলে শুধু পাকসৈন্যর গতিবিধির ও ক্ষমতা সম্মন্ধে খবর সংগ্রহই যথেষ্ট। এ পর্যন্ত যা বলা হলো তা হচ্ছে শত্রর দুর্বলতম স্থান খুঁজে বের করা অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে শত্রর কোথায় জোর কম তা জানা, এবং সেই জায়গাতে শত্রকে আঘাত করা। প্রথম দিকে আঘাত মানে আত্মরক্ষা, কৌশলশিক্ষা ও অবরোধ। পরে আবেরোধের ফলে শত্রর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, শত্রর রসদ কমে গেলে, এক কথায় শক্রদুর্বল হয়ে পড়লে, শত্রকে আঘাত করা সহজ হয়। “বাংলাদেশে পাক দখলদার সৈন্যদের আরোধ কিভাবে হবে?-এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন নয়। পাকসৈন্য পুরোপুরি বাইরে থেকে, অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আনা রসদ এবং শত্রসম্ভারের সাহায্যে লড়াই চালাচ্ছে। সুতরাং তাদের রসদ আনার পথ বন্ধ করতে পারলেই লড়াই জেতার অর্ধেকটাই হয়ে যাবে। মুক্তিবাহিনীও সঠিক পথেই চলেছে। তারা ইতিমধ্যেই বন্দরগুলো প্রায় অকেজো করে য়য়েছে। ফলে পাকসৈন্য জলপথের সুযোগ আর বিশেষ নিতে পারছে না। বাকি আছে বিমান যোগযোগ, এবার সেটা নষ্ট করার ব্যবস্থা দেখতে হবে। এই ধরনের অবরোধের সাথে সাথে নানা জায়গা জুড়ে ছোটখাটো আক্রমণ করে পাকসৈন্যকে পর্যুদস্ত করে তুলতে হবে তাতে গ্রামবাসীগণও নিজস্ব ক্ষমতা অনুসারে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কিভাবে তা সম্ভব হতে পারে, সে সম্বন্ধে পরে আলোচনা করা হবে। মোদা কথা এই লড়াই যে পর্যায়ে এগিয়ে এসেছে তাতে প্রতিটি সাধারণ মানুষকে হয় তথ্য সংগ্রহ, নয় অন্য পথে মুক্তিবাহিনীকে সহায্য করতে হবে। কারণ সেটাই স্বাধীনতা লাভের একমাত্র পথ।