পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

230 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় দুর্ভিক্ষের বাংলার বাণী ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ করালগ্রাসে বাংলাদেশ মুজিব নগরঃ ৩য় সংখ্যা সম্পাদকীয় দুর্ভিক্ষের করালগ্রাসে বাংলাদেশ দুর্ভাগা বাংলার শত্রকবলিত এলাকাসমূহে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হইয়াছে। বাংলাদেশের ১২টি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়িয়া ভয়াল দুর্ভিক্ষের মরণ-ছোবলে ইতিমধ্যেই ১৯১টি মানবজীবন মৃত্যুর অতলান্তে হারাইয়া গিয়াছে। ঘরে ঘরে উঠিয়াছে অন্নহীন উপায়হীন বুভুক্ষ মানুষের মরণার্তি। পদ্মা, মেঘনা যমুনা আড়িয়ালখাঁর তীরে তীরে বাতাসে বাতাসে ভাসিয়া বেড়াইতেছে দুঃসহ ক্ষুধার জুলায় জর্জরিত অগণিত নরনারী শিশুর সকরুণ আর্তনাদঃ বাঁচাও। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খরব অনুসারে, যে ১২টি জেলায় সর্বনাশা দুর্ভিক্ষ সমস্ত হিংস্রতা লইয়া মারণমৃত্যে মাতিয়া উঠিয়াছে সেই জেলাগুলি হইতেছে ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, বরিশাল, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা। দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকাসমূহে প্রতিদিন অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছি। প্রতিদিন আগণিত মানুষ অনাহারে তিলে তিলে ধুকিয়া ধুকিয়া মরিতেছে। অধিকৃত এলাকা সফর শেষে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ডাঃ জন রোড বলিয়াছেন, “বাংলাদেশে ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পর বর্তমানে যে ধরনের খাদ্যভাব দেখা দেয়াছে এরূপ সাংঘাতিক অবস্থা আর কখনো দেখা যায় নাই। কম করিয়া ধরিলেও প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ আসন্ন দুর্ভিক্ষের সময় অনাহারে মৃত্যুবরণ করিতে বাধ্য হইবে। ইহার চাইতে উদ্ধেগজনক খবর, ইহার চাইতে ভয়াবহ অবস্থা আর কি হইতে পারে? জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট অনুসারে পৃথিবীতে যত রকমের দুঃখ আছে তার মধ্যে সব চাইতে মর্মান্তিক, সব চাইতে দুঃসহ হইতেছে অনাহারে খাকার দুঃখ, অফুরন্ত ঐশ্বর্যে ভরা এই পৃথিবীতে ক্ষুধার যন্ত্রণায় পুড়িয়া তিলে তিলে ছাই হওয়ার দুঃখ। আর এই দুঃখ আজ যুদ্ধবিক্ষত বাংলার মানুষকে আষ্টেপৃষ্টে গ্রাস করিয়া লইয়াছে। বাংগালী জঙ্গীশাহীর গুলি খাইয়া মরিতেছে, রোগ ব্যাধিতে মরিতেছে অনাহার-বুভূক্ষার সুতীব্র দংশনের দুঃসহ যন্ত্রণায়। কিন্তু কেন? এই বাংলা ছিল সোনার বাংলা একদিন বাংলাদেশ ছিল অফুরন্ত ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার। সেদিন বাংলার মাটি ছিল স্বর্ণপ্ৰসবিনী। বাংলার সেই স্বর্ণযুগে বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে গোলাভরা ধান ছিল, গোয়ালভরা গরু ছিল, পুকুরভরা মাছ ছিল, দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তর ভরিয়া ছিল সোনালী ফসলের সোনার সম্পদ। সেদিন বাংলার দশদিগন্ত্রে ছড়াইয়া ছিল সুখ আর তৃপ্তির মুঠো মুঠো সোনা। বাংলার মানুষ সেদিন নদীর বাঁকে, চাষের ক্ষেত্রে, খালে বিলে গলা ছাড়িয়া গান গাহিত, প্রাণ খুলিয়া হাসিত, জীবনকে অভিনন্দন জানাইতে পারিত কিন্তু সোনার বাংলার সেই সোনার দিনগুলি কবে কোথায় হারাইয়া গিয়াছে। বাংলার সোনার সম্পদই তার কাল হইয়াছে। এই সম্পদের লোভেই বার বার বাংলার শ্যামল উপকূল হানা দিয়াছে সম্পদলোভী ঠগ, বগী,

  • বাংলার বাণীঃ সাপ্তাহিক। সম্পাদকঃ আমির হোসেন। মুজিবনগর হতে আমির হোসেন কর্তৃক বাংলার বাণী প্রেসে মুদ্রিত এবং প্রকাশিত।