পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

233 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ অধিকৃত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থার বাংলার বাণী মুজিব নগরঃ | ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ নমুনা ৩য় সংখ্যা অধিকৃত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থার নমুনা স্কুল কজেজে ছাত্রসংখ্যা হাস্যকররূপে নগণ্য (বিশেষ প্রতিনিধি) বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় হানাদার বাহিনীর চণ্ডনীতি অব্যাহত রহিয়াছে। বাঙ্গালী জাতিকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিক্ষেপ করিয়া চিরতরে পঙ্গু করিয়া রাখার দূরভিসন্ধি হাসিলের উদ্দেশ্যে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে বর্বর নিধনযজ্ঞ পরিচলনা করে, উহার বিভীষিকাময় স্মৃতি বাঙালীর মন ও মানস হইতে এখনও মুছিয়া যায় নাই। আজও ছাত্র-শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের বুলেটবিদ্ধ ধ্বংস্তুপ বাংলার ছাত্র-শিক্ষকদের নিরন্তর চাবুক মারিয়া বলিয়া দিতেছে হানাদার পাঞ্জাবী ডালকুত্তার দল চায় বাংলাদেশের শিক্ষা জীবনকে পঙ্গু করিয়া দিতে, ছাত্র-শিক্ষ বুদ্ধিজীবীসহ গোটা বাংগালী জাতিকে নিশ্চিহ্ল করিয়া দিতে, চায় বাংলাকে চিরদিন পদানত করিয়া রাখিতে। তাছাড়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ৭ই মার্চের ভাষণে নির্দেশ দিয়াছেন, যতদিন বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, ততদিন স্কুলকলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাই আজ আর বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকদের ভীর নাই। শিক্ষাঙ্গণ করিতেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সুবিস্তৃত প্রাঙ্গণে আপন আপন দায়িত্ব। সেই কারণেই, অধিকৃত এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসিয়াছে বলিয়া জঙ্গীশাহীর অবিরাম প্রচারণা সত্ত্বেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখনও গড়ের মাঠ। আর ইহাতে ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে জল্লাদশাহী। প্রতিহিংসা চরিতার্থতার জন্য পাকফৌজ এখন ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছে অধিকৃত এলাকায় এখনও যে অল্পসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষাবিদ রহিয়াছেন তাহাদের উপর। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের খবরে প্রকাশ যে, দখলদার জঙ্গীবাহিনী সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ততঃ ১৫ জন বিশিষ্ট অধ্যাপককে গ্রেফতার করিয়ছে কিংবা সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হইবার নির্দেশ দিয়াছে। হানাদার বাহিনী যাঁহাদের উপর নির্দেশ জারী করিয়াছে তাঁহাদের মধ্যে রহিয়াছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের রীডার ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক ডঃ আহমদ শরীফ, ইংরাজী বিভাগের রীডার ডঃ এহসানুল হক এবং বিজ্ঞান বিভাগের ৪জন বিশিষ্ট অধ্যাপক। এই গ্রেফতারের ব্যাপারে অবশ্য পাকিস্তান সরকার নীরব। শিক্ষা বিভাগের সহিত সংশ্লিষ্ট মহলের সংবাদে প্রকাশ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে গড়ে ৪৭/৪৮ জন ছাত্র ক্লাসে আসে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজারেরও অধিক ছাত্রের মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র ১৬ জন এবং ঢাকা কলেজের প্রায় ১ হাজার ছাত্রের মধ্যে ৬০ জন, ল’কলেজ ও নটরডেম কলেজে কেহই ক্লাসে যোগদান করিতেছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র ১৬ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপস্থিতির সংখ্যাও প্রায় অনুরূপ।