পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

239 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় কি বাংলার বাণী ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ দেখিলাম মুজিব নগরঃ ৪র্থ সংখ্যা বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় কি দেখিলাম অতি সম্প্রতি বাংলার বাণীর একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছেন। সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধি যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন তাহারই শেষ অংশ এখানে ছাপা হইল। অধিকৃত এলাকায় পাক সেনার যথেচ্ছভাবে স্থানীয় অবাঙালী কুলি-কামিন এবং চোর-ডাকাত গুণ্ডাবদমায়েশদের লইয়া বদর, রাজকার ও মুজাহিদ বাহিনী গঠন করিয়া চলিয়াছে। তাহদের সহিত কিছু মুসলিম লীগ ও জামাতের গুণ্ডা-পাণ্ডাও জুটিয়াছে। তাহারা পাক বাহিনীর ছত্রছায়ায় থাকিয়া যে ঘৃণ্য কেলেঙ্কারীর ইতিহাস সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে তাহা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। পাক বাহিনী নিজেরা যে কোন সম্মুখসমরে গা বাঁচাইয়া চলিয়া প্রায়শঃই ইহাদিগকে মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলিয়া দেয়। রাত্রিকালে পাক বাহিনী যেখানে শিবিরের বাহিরে আসিবার কল্পনাও করিতে পারে না সেখানে রাজাকার বা মুজাহিদ বাহিনীর লোকদের দিয়া শিবিরসমূহে নৈশকালীন পাহারা দিবার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। সামান্য কয়েক দিন অনুশীলনীর পরই তাহাদিগকে ফ্রন্টে পাঠাইয়া দিয়া খান সেনারা নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে গা বাঁচাইয়া অবস্থান করে। সে জন্য প্রতি ক্ষেত্রেই স্বল্প ট্ৰেইংপ্রাপ্ত এইসব বালখিলারা হয় পালাইয়া প্রাণ বাঁচায়, না হয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চত নিশানায় পরিণত হয়। হাট-বাজার অধিকৃত এলাকার হাট-বাজার প্রায় সবই কোনমতে চলিতেছে। এবং জিনিসপত্রের দাম আগুন হইয়া উঠিয়াছে। অতি সম্প্রতি সেখানে লবণ প্রতি সে দুই টাকা হিসেবে এবং কিছুদিন আগে কেরোসিন তেল প্রতি টিন ৪৫ টাকা হইতে ৫২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হইয়াছে, ইদানীং তাহা কমিয়া ২৮ টাকা হইতে ৩২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হইতেছে। চাউল আটা প্রায়ই হঠাৎ করিয়া বাজার হইতে উধাও হইয়া যায়। সাধারণ চাউলের দর এ সময় সাধারণতঃ মণপ্রতি ৪২ টাকা হইতে ৪৮ টাকা পর্যন্ত হইয়া থাকে, বর্তমানে উহা ৬০ টাকার উপরে। গ্রামাঞ্চলে তাহাও পাওয়া দুষ্কর। এইসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং খাদ্যশস্যের এরূপ উর্ধ্বগতির কারণ কি এই সম্পর্কে জনৈক ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করা হইলে তিনি জানান যে, প্রতিটি নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য শহর হইতে খরিদ করিয়া অবাঙালী আধুষিত এলাকায় মজুদ করা হইয়াছে। সামরিক বাহিনীর খাদ্যশস্য যথেষ্ট জমা হইয়া যাওয়ায় তাহারা লুটপাট করিয়া নিজেরা না লইয়া অবাঙালী ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করিয়া দিতেছে। এবং সেইগুলি সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, শন্তাহার, ঈশ্বরদী, খালিশপুর ইত্যাদি বিশেষ এলাকায় জমা করা হইয়াছে। তাহাদের উদ্দেশ্য কি জানা ভার। ব্যবসায়ীটি আরো জানান, স্থানীয় হাট-বাজারগুলির আড়তগুলিতে প্রথমদিকে যে লুটের তাণ্ডব চলিয়াছিল সে তাণ্ডবে কোন বাঙালী আড়তই রক্ষা পায় নাই। বর্বরা হয় লুটপাট করিয়া মালামাল লইয়া গিয়াছে, না হয় আড়ত অগ্নিদগ্ধ করিয়াছে। কাজেই ব্যবসায়ীরা রাতারাতি পথের ভিখারী হইয়া ব্যবসা গুটাইতে বাধ্য হইয়াছেন।