পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

240 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড জনৈক গ্রামবাসীকে স্থানীয় হাটের ভয়াবহ অবস্থার কথা প্রশ্ন করিলে তিনি জানান, প্রায়ই কিছু না কিছু রাজাকার ও পাকবাহিনী আসিয়া জোরপূর্বক দোকানদারের নিকট হইতে সাধ্যাতিরিক্ত অর্থ চাহিয়া বসে এবং অর্থদানে বিলম্ব ঘটিলে মারধর, খুন-জখম করিতেও দ্বিধাবোধ করে না। তাহারা সবকিছু লুটপাট করিয়া লইয়া যায়। ইহার ফলে কোন ব্যবসায়ীই আর নতুন জিনিস না কিনিয়া দোকান আপাততঃ বন্ধ করিয়া দিতে বাধ্য হইয়াছেন। স্কুল-কলেজ অধিকৃত এলাকায় স্কুল-কলেজগুলির অবস্থা চরম নৈরাশ্যজনক। স্কুলগুলিতে ৫০০-৬০০ ছাত্রের মধ্যে ২-১ জন ছাত্র মাঝেমধ্যে বেড়াইতে আসে। পড়াশোনার প্রশ্নই উঠে না। বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষায় হলগুলিতে ছাত্রদের অনেক ভয়ভীতি প্রদর্শন করাইয়াও মুষ্টিমেয় সংখ্যক ছাড়া কাহাকেও উপস্থিত করাইতে পাকবাহিনী ব্যর্থ হইয়াছে। যাহারা পরীক্ষায় উপস্থিত হয় নাই, তাহদের পিতামাতার নিকট কারণ দর্শাইবার নোটিশ যাইতেছে বলিয়া প্রকাশ। কলেজগুলিতে কিছু কিছু অবাঙালী ছাত্র হাজিরা দেয় এবং এইসব অবাঙালী ছাত্ররা প্রায়ই ক্লাসের দিকে না যাইয়া ক্যান্টিন ও কমনরুমের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করিয়া কালক্ষেপণ করে। শহরের পথ-ঘাট নিরাপত্তার ভয়ে সর্বদা সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত। শহরবাসীরা একান্ত বাধ্য না হইলে ঘর হইতে বাহির হইবার চেষ্টা করেন না। শহরের প্রায় বড় বড় দোকনগুলি তালাবন্ধ হইয়াছে। দোকানগুলির সাইনবোর্ড ও বিজ্ঞাপনে নতুন উর্দু অক্ষর বসিয়াছে। বাঙালী পথচারীকে ব্যঙ্গ করিতেছে। রাতারাতি শহরের সকল সাইনবোর্ড ও মোটর গাড়ী, রিকশার নম্বর-প্লেট বাংলা হইতে উর্দুতে লিখিতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়ীঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও দোকানগুলি ইতিমধ্যে অবাঙালী ও জামাত মুসলিম লীগ সমর্থকদের মধ্যে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হইয়াছে।