পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

246 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ইয়াহিয়া এই রায় ঘোষণার পর নাটকীয় কোন ঘোষণা করিতেও পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষেরা স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়া দিয়াছেন, বিনাশর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দেওয়া না হইলে এবং বাংলাদেশের মাটি হইতে হানাদার পাকিস্তানী সেনাদের প্রত্যাহার করা না হইলে বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসার কোন সম্ভাবনা নাই। আর ইয়াহিয়ার সাধের পশ্চিম পাকিস্তানও সর্বনাশের এই লেলিহান অগ্নিশিখা হইতে পরিত্রাণ পাইবে না। দখলীকৃত এলাকার পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাঁটির উপর মারাত্মক পাল্টা আক্রমণ শুরু করিয়াছেন বাংলার তরুণ যোদ্ধারা। গেরিলা আক্রমণের হাত হইতে রাজধানী ঢাকা শহরও আজ আর নিষ্কৃতি পায় না। প্রতিদিন যাইয়া নরপশুদের বক্ষভেদ করিয়া চলিয়াছে প্রতি মুহুর্তে। ইয়াহিয়ার সংকট আজ সীমাহীন। এই মারাত্মক সংকট হইতে পরিত্রাণ পাইবার জন্য ইয়াহিয়া ও তাহার সহচরেরা মস্কো, ওয়াশিংটন, তেহরানসহ বহু রাজধানী পরিক্রমা করিয়াছে। কিন্তু আশার আলো কোথাও নাই। এক্ষণে আপোষমূলক আলোচনা চালাইবার জন্য ইয়াহিয়া ধর্ণা দিয়াছে ইরানের শাহের দরবারে। সম্প্রতি তেহরানে গিয়া ইয়াহিয়া খান নিজে এই আপোষের অভিমত ব্যক্ত করিয়াছে। কিন্তু ইরানের শাহ ইয়াহিয়াকে কোন আশার বাণী শোনাইতে পারেন নাই। বাংলাদেশের নেতারা সুস্পষ্ট ভাষায় জানাইয়া দিয়াছেন, বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদান না করিলে আলোচনার কোন প্রশ্নই উঠে না। কূটনৈতিক মহলের ধারণা, ইয়াহিয়ার সকল উমেদারী ব্যর্থ হইতে বাধ্য, যদি না বঙ্গবন্ধুকে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। জানা গিয়াছে, ভারত ইরানের শাহকে জানাইয়া দিয়াছে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে বাংলাদেশের নির্বাচিত গণনেতারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। ভারত এ ব্যাপারে কিছুই করিতে পারে না। অতএব, ইয়াহিয়া যদি সত্যই আপোষ চায় তবে তাহাকে বাংলাদেশ সরকারের সহিত আলোচনায় বসিতে হইবে। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করিয়াছেন, স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ আজ ইতিহাসের বাস্তব সত্য। এই সত্যকে স্বীকার না করিয়া কোন আলোচনা হইতে পারে না। পাকিস্তানের মারাত্মক আর্থিক সংকট, ধ্বংসোন্মুখ অর্থনীতি, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও সিন্ধুর ব্যাপক গণঅসন্তোষ এবং সম্ভাব্য সশস্ত্র গণঅভু্যত্থান আজ অক্টোপাসের মত ঘিরিয়া ধরিয়াছে ইসলামাবাদের সাধের সিংহাসনকে। ইরান অথবা পাকিস্তানের অন্যান্য তথাকথিত বন্ধুরাষ্ট্র এই দুদিনে জঙ্গীশাহীকে বাস্তব সাহায্য দিতে সক্ষম নয়। চীনের ভূমিকা আরো অস্পষ্ট। নাই। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিয়া কোন ফল হইবে না। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশ সমস্যা প্রধান আলোচ্য বিষয় হইবে বলিয়া কূটনৈতিক মহল আশা প্রকাশ করিয়াছেন। এবং বলাবাহুল্য ইসলামাবাদের জঙ্গীচক্র জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মারাত্মক আক্রমণের সম্মুখীন হইবে। এই অবস্থায় ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি বলিয়া জেনারেল ইয়াহিয়া ছটফট করিয়া মরিতেছে। কিন্তু ইতিহাসের রায় ইয়াহিয়ার পাঠ করা উচিত। দেওয়ালের লিখন আজ সুস্পষ্ট-স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এই শতাব্দীর ঘটনাবহুল ইতিহাসের আর একটি বাস্তব সত্য।