পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

256 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ কাহার সঙ্গে আপোষ, কিসের বাংলার বাণী ৫ অক্টোবর, ১৯৭১ আপোষ? মুজিবনগরঃ ৫ম সংখ্যা কিসের আপোষ? রাজনৈতিক ভাষ্যকার স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের নিদের্শে পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্রতা যতই বৃদ্ধি পাইতেছে, ক্ষয়িষ্ণু পাঞ্জাবী উপনিবেশবাদের শেষ প্রতিভূ জল্লাদ ইয়াহিয়ার লেলাইয়া দেওয়া ভাড়াটিয়া হানাদার বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় যতই প্রত্যাসন্ন হইয়া উঠিতেছে, বিশ্বের দশ দিগন্তে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সমর্থনে জনমত যতই বলিষ্ঠতর ভাষায় সোচ্চার হইতেছে, ইহারই পাশাপাশি ততই ঘণীভূত হইয়া উঠিতেছে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানকে কেন্দ্র করিয়া বিভিন্ন মহলে সৃষ্ট আপোষ নামক বিভ্রান্তির ধূম্রজাল। এই বিভ্রান্তির কালো মেঘের গর্জনের জবাবে প্রলয় রাত্রির বিক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালার সংক্ষুব্ধ হুঙ্কারের মতই উদ্ধত প্রশ্নের ভাষায় দিকে দিকে গর্জিয়া ফিরিতেছে দশ লক্ষ শহীদের আত্মা আর মুক্তি যুদ্ধে নিয়োজিত কোটি কোটি বাঙ্গালীর কণ্ঠস্বর, কিসের আপোষ, কাহার সঙ্গে লক্ষ বাঙ্গালীর নরমুণ্ড লইয়া গেণ্ডুয়া খেলায় লিপ্ত জল্লাদের সঙ্গে আপোষের কোন প্রশ্নই ওঠে না। প্রশ্ন ওঠে না বাংলার মানুষের রক্ত আর স্বাধীনতার সঙ্গে বেঈমানী করিয়া আমার কারামুক্তিলাভের।” স্বাধীন বাংলার নেতা ও জনতার এই প্রত্যয়দৃপ্ত দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠস্বরকে দুবিনীত নিয়তির কণ্ঠস্বর বলিয়া ধরিয়া নিয়া বিশ্ববাসী জানিয়া রাখুক, বঙ্গবন্ধুর নিদের্শে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুমহান উদ্দেশ্যে পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত থামিবে না। মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি, স্বাধীনতার স্বীকৃতি এবং জন্মভূমির বুক হইতে হানাদার শত্রুসৈন্য বাহিনী প্রত্যাহারের আগে এক মুহুর্তের জন্যও স্তব্ধ হইবে না বীর বাঙ্গালীর সমরাস্ত্রের ধ্বনি। দুশমনের সঙ্গে আপোষের কোন প্রশ্নই ওঠে না। বাঙ্গালী জাতির এই জীবনপণ সংগ্রামের লক্ষ্যকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করিয়া নিলেই অধিকতর রক্তপাত এড়াইবার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘটিতে পারে, হইতে পারে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে এক রক্তাক্ত যুদ্ধের অবসান। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ৭২ ঘন্টা ক্র্যাস বেঙ্গলী প্রোগ্রাম অনুযায়ী মানবেতিহাসের নজিরবিহীন ভয়াবহ বর্বর গণহত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দাবাইয়া দিতে চাহিয়াছিল। কিন্তু শক্তি প্রয়োগ আর হিংস্র বর্বরতার কাছে বাঙালী জাতি মাথা নত করে নাই। বরং যতই দিন গিয়াছে, ততই জোরদার হইয়াছে বাংলাদেশের মুক্তি- শক্রমুক্ত হইয়াছে নয়া নয়া এলাকা। ফলে বেসামাল ইয়াহিয়া দশ লক্ষ বাঙালীর লাশের ওপর বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসনের মঞ্চ সাজাইয়া লিপ্ত হইয়াছে তাহার জীবনকে বাজি রাখিয়া রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধারের তস্করসুলভ জুয়া খেলায়। কিন্তু তাতেও হতোদ্যম হয় নাই বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা।