পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

266 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ওয়াশিংটন সিনেটের বৈদেশিক সাবকমিটির বৈঠকে ডঃ টেলর বলিয়াছেন ‘পাকিস্তানে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী হইবার পর তুরস্কের মাধ্যমে পাকিস্তানে মার্কিন অস্ত্র সাহায্য অব্যাহত রাখিয়া মার্কিন সরকার একটি খুবই গৰ্হিত অপরাধ করিতেছে।” ডঃ টেলর আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছেন আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অনাহারের কবলে পড়িবেন। এবং নতুন করিয়া শরণার্থী স্রোত আসিতে থাকিবে। তিনি বলেন শেষ পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা হয়তো দেড় কোটিতে পৌছাইবে। এই সংখ্যা দক্ষিণ ভিয়েতনামের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রসংঘে সাধারণ পরিষদের নেপালের স্থায়ী প্রতিনিধি মিঃ পদ্মবাহাদুর ক্ষেত্রী বলিয়াছেন যে নেপাল সরকার ও নেপালের অধিবাসীরা বাংলাদেশের বেদনায়ক ঘটনায় মর্মাহত হইয়াছেন। তিনি এই মর্মান্তিক ঘটনাকে তুলনাহীন বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছেন। আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশের ব্যাপারে গণহত্যা ও অবাধ নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করিয়াছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ও সৌভ্রাতৃত্ব জ্ঞাপন করিয়া আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়ন ঘোষণা করিয়াছেন যে ‘বাংলাদেশের মানুষের এই সংগ্রাম শান্তি, প্রগতি ও গণতন্ত্রের জন্য বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী সংগ্রামের অংশ।’ বোম্বাইয়ের রান্দ্রা সেন্ট জোসেফ কনভেন্টের ছাত্রী এবং ক্রিশ্চিয়ান ষ্টুডেন্টস গ্রুপের সভানেত্রী কুমারী নোয়ালো গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন আগামী ৪ঠা নভেম্বর রান্দ্রা হইতে প্রায় ২ হাজার স্কুল ছাত্রী বাংলাদেশের সমর্থনে এক পদযাত্রা শুরু করিয়া দক্ষিণ বোম্বাইয়ের কুপারেজ পর্যন্ত যাইবে। গত ৫ই অক্টোবর ব্রাইটনের এক সমাবেশে বাংলাদেশের ব্যাপারে উদাসীন থাকায় জাতিসংঘ এবং বিশ্ব সমাজকে ধিক্কার দেওয়া হয়। গ্রেটবৃটেনের শ্রমিক দলের সম্মেলন উপলক্ষে এ্যাকশন বাংলাদেশ কর্তৃত্ব আয়োজিত এই সমাবেশে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য মিঃ জন ষ্টোন হাউজ বলেন ইহা ভাবিতে আশ্চর্য লাগে যে জাতিসংঘ এই বৃহত্তম মানবিক দুর্যোগের প্রতি দৃষ্টি দিতে ব্যর্থ হইয়াছে। লর্ড ব্রকওয়ে, বৃটেনস্থ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের সদস্য ব্রস ডগরাস এবং জুলিয়াস সিলভারম্যান এই সমাবেশে বৃক্ততা দান করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বৃটিশ পার্লামেন্টের প্রভাবশালী সদস্য মিঃ পিটার শোর। বিপুল করতালির মধ্যে শ্রমিক দলীয় নেতা মিঃ ফ্রেড ইভান্স ঘোষণা করেন বাংলাদেশকে তাহার স্বাধীনতা সংগ্রামে অস্ত্র এবং অন্যান্য জিনিস দিয়া সাহায্য করা উচিৎ। তাঞ্জানিয়া এবং জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাহার সাম্প্রতিক সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করিয়া জন ষ্টোন হাউজ বলেন, এই দুই দেশের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। তাহারা জন ষ্টোন হাউজকে বলিয়াছেন যে কোন একটি দেশ বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দান করিতে আগাইয়া আসিলেই তাহারাও বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিবেন। প্রেসিডেন্ট কাউণ্ডা বাংলাদেশে নির্যাতন বন্ধ করিবার জন্য ইয়াহিয়া খানের নিকট বেশ কয়েকটি চিঠি লিখিয়াছেন। জন ষ্টোন হাউস জাতিসংঘকে ক্লান্ত, জরাজীর্ণ এবং বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রমোদশালা বলিয়া অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থ যেখানে নাই এমন কোন বিষয় জাতিসংঘে উত্থাপিত হয় না।