পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

281 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ রাজনৈতিক দিগন্তে ংলার বাণী ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ মুজিবনগরঃ ১৫শ সংখ্যা রাজনৈতিক দিগন্তে যাত্রিক আজ মৃতুঞ্জয়ী ৭ই ডিসেম্বর। এক বৎসর আগে ঠিক এই দিনটিতেই অনুষ্ঠিত হইয়াছিল সেদিনের পাকিস্তানের ২৩ বছরের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। আর রাষ্ট্রীয় ভাগ্য নির্ধারণের প্রশ্নে নিজেদের অবাধ মতামত পেশের সেই প্রথম সুযোগেই শেখ মুজিবের বাংলার মানুষ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানাইয়া দিয়াছিল চিরদিন কাহারো ইতিহাসে নজীর বিহীন নিঃশব্দ ব্যালটের বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ মুজিবের বাংলাদেশ জানাইয়া দিয়াছিল বিদ্রোহী বঙ্গোপসাগরের প্রমত্ত হুঙ্কারে আমরাই আমাদের শাসন করিতে চাই- বাংলাকেই করিতে চাই বাংলার ভাগ্যবিধাতা। দ্ব্যর্থহীন ভাষায়, নিঃসঙ্কোচ আন্তরিকতায়, আর অন্তহীন ভালবাসা ও বিশ্বাসের সঙ্গে বাংলার মানুষ সেদিন নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণের ভার তুলিয়া দিয়াছিল বাংলার মুকুটহীন সম্রাট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। এ রায় শুধুমাত্র একটি বিক্ষুব্ধ বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর রায় ছিল না- এ রায় ছিল সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর বলিষ্ঠ রায়- সে দিনের পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীঘ ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করিয়া সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্লামেন্টারী দলের মর্যাদা এবং সমগ্র পাকিস্তান শাসনের অধিকার লাভ করে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে দুইটি সত্য দিবালোকের মত স্পষ্ট হইয়া যায়। প্রথমতঃ বাংলার মানুষ স্বাধিকার চায়- পশ্চিম পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের শৃঙ্খল চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য-নিয়ন্ত্ৰণ করিতে চায়। আর ৭ই ডিসেম্বর এই সত্যকেই সগৌরব মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করিয়া দেয় যে, একমাত্র শেখ মুজিবর রহমানেরই বাংলাদেশের এমনি সমগ্র পাকিস্তানের পক্ষ হইয়া কথা বলার অধিকার রহিয়াছে। ২৪ বৎসর আগে পাকিস্তান নামক রাজনৈতিক জারজ সন্তানের সৃষ্টি হইবার পর একটি দিনের জন্যও সে দেশের মানুষ স্বাধীনতার আস্বাদ লাভ করিতে পারে নাই। দুই যুগ ধরিয়া পশ্চিম পাঞ্জাবী পুঁজিপতি, শিল্পপতি, কায়েমী স্বার্থবাদী ও শোষক ষড়যন্ত্রকারীদের অদৃশ্য সূতার টানে যারাই ক্ষমতার আসনে সমাসীন হইয়াছে আবার চিৎপটাং হইয়া পড়িয়াছে, তারা সকলেই ছিল এই উপনিবেশবাদী দুঃশাসনেরই নাটবল্ট মাত্র। জনগণের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ ছিল না- জনগণকে তারা না পারিয়াছে আপন করিতে, না পারিয়াছে জনমতের কাছে মাথা নত করিয়া তাদেরকেই সকল শক্তির উৎস ধরিয়া তাদেরকেই সকল শক্তির উৎস ধরিয়া তাদের ইচ্ছানুসারে রাষ্ট্র শাসন করিতে। দুই যুগের ইতিহাস প্রমাণ করিয়াছে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট আমরা যা পাইয়াছিলাম তার নাম আর যাই হউক স্বাধীনতা নয়। বরং এইদিন স্বাধীনতার নামে শুধু গোলামীর জিঞ্জির বদল হইয়াছিল- ইংরেজদের বদলে আমরা আবদ্ধ হইয়াছিলাম পাঞ্জাবী উপনিবেশবাদের নির্মম শাসন ও শোষণের নিষ্ঠুর শৃঙ্খলে। এই শৃঙ্খলে বিশেষতঃ বাঙালী জাতির জন্য ছিল বৃটিশ পরাধীনতার চাইতে ভয়াবহ। শেখ মুজিবুর রহমানই একদিন বলিয়াছিলেন, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ২০০ বৎসরে বাংলাদেশকে যতটা শোষণ করিয়াছে, পশ্চিম পাকিস্তানীরা ২৩ বছরে তার চাইতে অনেক বেশী শোষণ করিয়াছে। ২৩ বছর ধরিয়া পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক ও শোষকের দল শাসনের নামে, ব্যবসায়ের নামে, বাণিজ্যের নামে বাংলার শ্যামল মাটিকে ক্ষত-বিক্ষত করিয়াছে, কামড়াইয়া ছিড়িয়া খাবলাইয়া খাইয়াছে বাঙ্গালীর হাড়, মাংস, কলিজা। ২৩ বছরে নির্মম দস্যর মত বলগাহীন শোষণ ও লুণ্ঠনে সোনার বাংলাকে পরিণত করিয়াছে শ্মশানে, অন্তহীন দুঃখের ভাগাড়ে। বাঙ্গালী জাতির দুঃখ, বঞ্চনা এবং দুর্ভোগ