পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

288 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড কমিটি গঠনের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য হইতে স্থির করা হয় যে উহা মন্ত্রিসভার অদীনে শুধুমাত্র সময়ে পরামর্শ দিবে, না ইহা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করিবে। কখনও কখনও এই ধরণের উপদেষ্টা কমিটি মন্ত্রিসভার অধীন হইয়া পড়ে আবার কখনও ইহা মন্ত্রিসভার সমান্তরাল ক্ষমতার অধিকারী হইয়া মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে। উপরন্তু অনেক ক্ষেত্রে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করিয়া সরকার জনসাধারণের দাবী দাওয়া বিবেচনার নামে একটি রক্ষাবর্ম সৃষ্টি করে। অতীতে আমাদের দেশে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এ ধরণের বহু অধ্যায় সংযোজিত হইয়াছে। কিন্তু কার্যকালে এই সব কমিটির তৎপরতা কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। যুদ্ধকালীন অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দানের জন্য এই সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির গুরুত্ব অনেক। প্রথমতঃ শক্রকে আঘাত হানার ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে সকল দলের মধ্যে সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত হইয়াছে। দ্বিতীয়তঃ বিভিন্ন দলের কর্মপ্রচেষ্টা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ যাই হউক না কেন- ভিন্ন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হইয়াছে। লক্ষ্য এক হওয়া সত্ত্বেও এই প্রাবহগুলিকে তুলনা করা চলে নদীর সাথে। ছোট বড় সকল নদীই সমুদ্রে মিলায়। কিন্তু প্রবাহগুলিকে একটি প্রকাণ্ড খাতে পরিচালিত করিলে উহাতে সর্বাপেক্ষা বেশী বেগের সঞ্চার হয়। বিভিন্ন দলের আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগ্রামকে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক ঐক্যবদ্ধ পথে পরিচালনা করিলে উহা হইতে সর্বাধিক ফল পাওয়া যায়। তৃতীয়তঃ এই উপদেষ্টা কমিটিতে যে নেতৃবৃন্দ রহিয়াছেন তাহদের পশ্চাতে রহিয়াছে দীর্ঘদিনের সংগ্রামী ঐতিহ্য। পরাধীন আমলে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীবিরোধী সংগ্রামে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর স্বৈরাচারী সরকারের বিরোধী সংগ্রামের অগ্নিপরীক্ষায় ইহারা সকলেই উত্তীর্ণ সৈনিক। সুতরাং অতীতের প্রথম সারির সৈনিকগণ আমাদের এই বলাই বাহুল্য। এই উপদেষ্টা কমিটির নিকট হইতে আমরা এমন কর্মপন্থা আশা করিব যে, যুদ্ধ প্রচেষ্টার সমস্ত ক্ষেত্র হইতে রণক্ষেত্র পর্যন্ত এই ঐক্যের বিশাল বলিষ্ঠ কার্যকর্ম সক্রিয় থাকে। রণক্ষেত্রে ও প্রচারণাযুদ্ধে শক্রর মোকাবেলার জন্য এই যক্তি পদক্ষেপের ফল ইতিমধ্যেই ফলিতেছে। অধিকৃত বাংলাদশের পুতুল গভর্নর ডাঃ মালিক কর্তার ইচ্ছায় প্রতিধ্বনি করিয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সহিত আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন। শক্র এই ঐক্যবদ্ধ শক্তির ভয়ে এমনই বেসামাল হইয়া পড়িয়াছে যে তাহারা এখন প্ৰলাপ বকিতেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিদানের জন্য বিশ্বব্যাপী দাবী সম্পর্কে নিশ্চপ থাকিয়া আওয়ামী লীগের সহিত আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশের মত নিবোধ পুনরুক্তি করিতেছে। শক্রর বিরুদ্ধে আমরা সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী এক সার্বিক যুদ্ধে রত। এই সার্বিক যুদ্ধে সর্বক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনের জন্য সংগ্রামী সকল দল মতকে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পথে অগ্রসর হইতে হইবে। এই উপদেষ্টা কমিটি আমাদের সংগ্রামী ঐক্যের প্রতীক। ইহাকে সংগ্রামের সকল স্তরে যুক্ত কর্মদ্যোগের মধ্যে ছড়াইয়া দিতে হইবে। সংগ্রাম পরিচালনার সকল স্তরে কীভাবে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করা যায় তাহা ছাড়ও ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের অধীনে সকল সংগ্রামী এই শরিক দলগুলিকে আরও তৎপর করিতে হইবে, ইহাদের মধ্যেকারে সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করিতে হইবে।