পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

292 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় নতুন বাংলা ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ রাজনৈতিক পরিক্রমা ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা রাজনৈতিক পরিক্রমা (ভাষ্যকার) নিক্সন সরকার জঙ্গী-ইয়াহিয়া সরকারকে অস্ত্র দিতেছে ও অর্থ সাহায্য করিতেছে। বাংলাদেশের গণহত্যার নায়ককে মার্কিন সরকারের এই খোলাখুলি সক্রিয় সমর্থনে বিশ্বের শান্তি ও স্বাধীনতাকামী জনগণ স্বাধীন দুনিয়া ও গণতন্ত্রের পূজারী ও একচেটিয়া স্বত্বাধিকারী আমেরিকার নিন্দায় মুখর হইয়া উঠিয়াছে। খোদ আমেরিকায় জনসাধারণ নিক্সন সরকারের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশে যাহারা মুক্তি সংগ্রামের প্রথম দিন গুলিতে মার্কিন সমর্থনের মোহ মনে পোষণ করিয়াছিলেন, তাঁহাদের মোহভঙ্গ হইয়াছে। বাংলাদেশের চেহারাটা চিনিয়াছে। কিন্তু মার্কিন মুলুকে গলব্রেথ সাহেবরা নিক্সন সরকারের খোলাখুলি সমর্থনে বিব্রত বোধ করিতেছেন। সুতরাং বাংলাদেশের ব্যাপারে তাহাকে কিছু বলিতে হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গলব্রেথ সাহেব তাই ভারতে ছুটিয়া গিয়াছেন। এক সময় তিনি ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি কলিকাতায় আসিয়া বাংলাদেশ সমস্যার একটা সমাধান বাতলাইয়াছেন। স্বায়ত্তশাসন নাকি বাংলাদেশ সমস্যার একমাত্র সমাধান। গলব্রেথ সাহেব হয়তো না জানার ভান করিয়াছেন। তাহাকে আমরা সবিনয়ে স্মরণ করাইয়া দিতেছি যে স্বায়ত্তশাসন চাহিবার অপরাধেই ইয়াহিয়া খান বাং নরমেধযজ্ঞ শুরু করিয়াছে। ১০ লক্ষ লোককে হত্যা করার পর, ইজ্জত নষ্ট করার পর, ৮০ লক্ষ শরণার্থীকে নিঃস্ব করিয়া ভারতে ঠেলিয়া দিবার পর পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান আর সম্ভব নয়। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে রক্তের দাম দিয়া বাঙ্গালীরা পরিপূর্ণ মুক্তি কিনিয়া লইবে। সুতরাং গলব্রেথের মতে সকল সভ্য মানুষ ও পাকিস্তানের অধিকাংশ লোক কামনা করিলে কী হইবে।” জানিনা গলব্রেথ সভ্য মানুষ বলিতে খুনী ইয়াহিয়ার বন্ধুদের কথা বুঝাইয়াছেন কিনা এবং পাকিস্তানের অধিকাংশ লোক বলিতে কি তাহদের প্রাণের ভুট্টো সাহেবদের কথা বুঝাইতে চাহেন কিনা। কিন্তু ন্যাড়া ক’বার বেলতলা যায়? গত ২৪ বছর বাঙ্গালীরা ঠকিয়া শিখিয়াছে, মুহুর্মুহু রক্ত ঢালিয়া বুঝিয়াছে যে, স্বাধীনতা ছাড়া কোন পথ খোলা নাই। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্তিত্ব অস্বীকার করিয়া পাশ কাটাইয়া সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব যে কোন মহল হইতেই আসুক না কেন বাঙ্গালীরা তাহা ঘৃণা ভরেই প্রত্যাখ্যান করিবে এবং করিয়াছেও। আপোষের পথে টানিবার জন্য বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানকে নাকি পরোক্ষভাবে মার্কিন সরকার টোপ ফেলিয়াছে। তাহার পাশাপাশি গলব্রেথ সাহেবদের এধরণের উক্তি উদ্দেশ্যমূলক। শেখ মুজিবুরকে একদিকে মুক্তিপণ হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা এবং অপরদিকে মার্কিন সরকারের সমালোচকের ভূমিকায় নামিয়া পাকিস্তানের পক্ষে ক্যানভাস করার কৌশল খাটাইয়া কোন লাভ নাই। মার্কিন ক্ষমতাশীল দল ও বিরোধীদলের এই ধরনের আপাতঃ পরস্পর বিরোধী ভূমিকাটা স্বচ্ছ একটা অভিনয়। বাংলাদেশের লোক আর সাম্রাজ্যবাদের ধোঁকায় ভুলিবে না।