পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

297 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড বিভিন্ন সময়ে নাজেহাল করায় জনগণের মনোবল ঠিক রহিয়াছে। অষ্টগ্রাম হইতে মুক্তিবাহিনী ইতিমধ্যে গৌরীপুর, পূর্বধলা দুর্গাপুর, দল মাকান্দা, বারহাট্টা, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, ভৈরব, ভালুকা, ত্রিশাল, ফুলবাড়ীয়া প্রভৃতি অঞ্চলে অভিযান চালাইয়া উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হানাদার সৈন্যকে হত্যা করে ও যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র দখল করে। ফুলবাড়ী রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম মহকুমার ফুলবাড়ী থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে, এই থানায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু রহিয়াছে। উল্লেখযোগ্য যে, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হইতেই এই থানায় আওয়ামী কমিটির উদ্যোগে গঠিত হয় গণবাহিনী। এই গণবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী বর্তমানে ধরলা নদী বরাবর প্রতিরক্ষা লাইন (ডিফেন্স লাইন) স্থাপন করিয়া লালমনিরহাট হইতে পরিচালিত পাকিস্তানী সৈন্যদের আক্রমণ সার্থকভাবে প্রতিহত করিয়া আসিতেছে। বিভিন্ন সমস্যা এই এলাকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনও অধিকৃত এলাকায় সহিত সংশ্লিষ্ট থানায় জনসাধারণ অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মখীন হইয়াছে। বর্তমানে এখানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হইতে দুঃস্থ জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সাহায্য প্রদানের ব্যবস্তা করা বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষতঃ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লোকজনের পরিবারবর্গকে সাহায্য দেওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি অবিলম্বে সাহায্যাদি প্রদান এবং বেসামরিক প্রশাসন ও মুক্তিবাহিনীর কাজের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনপূর্বক আদর্শ প্রশাসন ব্যবস্থা কায়েমের দাবীতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল উত্তরাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহিত সাক্ষাৎ করেন। তিনি অবিলম্বে মুক্তাঞ্চলে সাহায্য, পুনর্বাসন ও বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সর্বপ্রকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করিয়াছেন। মনোবল অটুট যাহা হউক, শত সমস্যা ও অসুবিধা সত্ত্বেও জনগণের মনোবল অটুট রহিয়াছে। প্রত্যেক রবিবার হইতে গড়ে ২/১ জন করিয়া সবলদেহী সুস্থ যুবকেরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করিয়াছে। মুক্তিবাহিনীর শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাইতেছে। তেতুলিয়া দিনাজপুর জেলার তেতুলিয়া থানাও আগাগোড়াই মুক্ত। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এই থানার কোন গ্রামে আজ পর্যন্ত প্রবেশ করিতে পারে নাই। প্রত্যেক গ্রামে ঘর হইতেই সুস্থ-সক্ষম যুবকেরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করিয়াছে। এই থানাটি বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। মুক্তিবাহিনী এখান হইতে বোদা, পচাগড়, দেবীগঞ্জ, রুহিয়া, ঠাকুরগাঁও প্রভৃতি অঞ্চলে বহু অভিযান চালাইয়াছে। এইসব অভিযানে বহু পাক সৈন্য নিহত, বহু ব্রীজ ধ্বংস, ঠাকুরগাঁও (মহকুমা শহর) বিজলী সরবরাহ কেন্দ্র বিধ্বস্ত ও বহু রাজাকার খমত হইয়াছে।