পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

299 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিশেষভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এক ঢিলে দুই পাখি মারিতে পারিবে। বাংলাদেশের পড়িবে এবং সাবেক পাকিস্তানকে বহাল তবিয়তে সাম্রাজ্যবাদের আলালের ঘরের দুলাল হিসাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দুষ্টগ্রহ হিসাবে টিকাইয়া রাখা হইবে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ব্যর্থ হওয়ার একটি মাত্র অর্থ এই মহাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বল হওয়া। বাংলাদেশের এই জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম প্রথমাবধি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটি গণতান্ত্রিক আদর্শ ও জাতীয় মুক্তির জন্য বাঙ্গালীরা আজ অস্ত্র ধরিয়াছে। অপরদিকে পাক-ভারত যুদ্ধ বাঁধিলে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার এই খণ্ডে শান্তি স্থাপনের নামে এবার মুরববী সাজিয়া ভারতের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সহায়তায়-নয়াদিল্লরি বর্তমান নিরপেক্ষ নীতিকে বর্জন করিতে বাধ্য করিতে পারিবে। এভাবে ভিয়েতনামে পরাজয়ের গ্রানি ও ক্ষয়ক্ষতি পোষাইয়া লওয়া যাইবে। প্রথমাবধি বাংলাদেশ সমস্যা “পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলিয়া একদিকে সাম্রাজ্যবাদীদের বকধাৰ্মিক সাজার চেষ্টা এবং অপরদিকে বাংলাদেশ সমস্যা অব্যাহত থাকিলে পাক-ভারত উত্তেজনা বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া উহারা দিনরাত চিৎকার করিতেছে। তাহদের এই সব বাকচাতুর্য ও প্রচারণা তাৎপর্যহীন নহে। এবারের ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ সেই ইঙ্গিতই বহন করে। মূলতঃ সাম্রাজ্যবাদের এই চক্রান্ত ব্যর্থ করার দায়িত্ব আমাদের। ইয়াহিয়ার দসু্যবাহিনীর উপর আমাদের আক্রমণের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি করিতে হইবে এবং এই সমেয় যে সমস্ত বন্ধু রাষ্ট্র বিশেষভাবে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভিন্নভাবে সাহায্য করিতেছে উহা পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করিতে হইবে। আমাদের মধ্যে তথাকথিত বহু দেশপ্রেমিক হঠাৎ গজিয়া উঠিয়াছেন-তাহারা আমাদের পাঁচ পার্টির এই ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করিয়া থাকেন এবং ঘটনার বাস্তব বিশ্লেষণের নামে এই কথা বুজাইতে চাহেন যে, বাংলাদেশ সরকারকে সোভিয়েত বক্ষকে ঠেলিয়া দেওয়ার জন্য কারসাজি চলিতেছে। একদিকে সোভিয়েতের ভূমিকা আশানুরূপ নহে বলিয়া তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা এবং অপরদিকে পাকিস্তানে মার্কিন অস্ত্র সাহায্যের বিরুদ্ধে মামুলী ধরণের নিন্দা করিয়া ইহারা চলিয়াছেন। অথচ প্রতিদিনই সোভিয়েত ইউনিয়ন কোথায় বাংলাদেশ সম্পর্কে কী বলিয়াছে অনুবীক্ষণ যন্ত্র চোখে লাগাইয়া উহার মধ্যে ক্রটি খোঁজেন, উল্লসিত হইয়া উঠেন। যেন ভাবখানা এই যে, ‘বলি নাই রাশিয়া নিজের স্বার্থ ছাড়িয়া এক পাও বেশী বাড়িবে না। এই দেখ সোভিয়েত আলজেরিয়া যুক্ত ইস্তেহার, এই দেখ পদগনি ইরানে কী বলিয়াছেন। পাকিস্তানী বেতারের মিথ্যা প্রচারণাকেও এই ক্ষেত্রে কাজে লাগাইতে ইহারা পিছপা নহেন। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার দসু্যবাহিনী অভিযান চালাইয়া যেখানে হিমশিম খাইতেছে সেখানে কিসের জোরে ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেয় ইহা একটি বালকও বলিতে পারে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত ছাড়া ইয়াহিয়ার সাধ্য নাই বাংলাদেশ সমস্যা সামনে রাখিয়া ভারতের সহিত যুদ্ধ বাধাইতে সে সাহসী হয়।