পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

301 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় নতুন বাংলা ১১ নভেম্বর, স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ নাই ১ম বর্ষঃ ১৩শ সংখ্যা ᎼᎼᎸᎩ সম্পাদকীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষ নাই আট মাস যাবৎ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলিতেছে। একদিকে ইসলামবাদের জঙ্গী সরকারকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ অস্ত্র সাহায্য করিতেছে, গণচীন তাহাকে অভয়বাণী শুনাইতেছে অন্যদিকে তাহারা বিশ্বশান্তির জিম্মাদার সাজিয়া বাংলাদেশের একটা শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিতেছে। ইয়াহিয়ার গণহত্যার মুখে ইহারা নীরব ছিল। আমেরিকা ও বৃটেন ইহাকে এখনও পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলিয়া চালাইতেছে। ইন্দোনেশিয়ার ব্যাপক গণহত্যার সময় আমরা গণচীনকে ধিক্কার বাণী উচ্চারণ করিতে শুনিয়াছি। এমন কি কুটনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত ছিন্ন করিয়াছে। কিন্তু বাংলাদেশের গণহত্যায় আজ মহাচীন নীরব। যুদ্ধের প্রশান্তি তার চোখেমুখে, এপ্রিল মাসে ব্যাপক গণহত্যার মুখে ঢাকায় বাক্স বাক্স গুড়া দুধ পাঠাইয়াছে সাহায্য বাবদ। কাদের জন্য সে সাহায্য ছিল, কেন দেওয়া হইয়াছিল আমরা জানি না। ভারত ৯০ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়াছে। তাহাদের দায়দায়িত্ব কার্যতঃ একাই বহন করিতেছে। পাকিস্তানের উস্কানীর মুখে এখনও সংযমের পরিচয় দিতেছে। বাংলাদেশ সমস্যাকে এখন পাক-ভারত সমস্যা রূপে দাঁড় করাইবার জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের চোখের ঘুম গিয়াছে। তাহদের চোখের ঘুম আরও একটি কারণে গিয়াছে। পাকিস্তানে অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তাহদের আশার গুড়ে বালি। বাংলাদেশ পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য লড়িতেছে। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে তাহারা ঘাতক ইয়াহিয়ার পাকিস্তানের ছত্রছায়ায় নামকাওয়াস্তে থাকিতেও নারাজ। সাম্রাজ্যবাদীদের সাধের ঘাঁটি পাকিস্তানের এই হালে বিচলিত হইয়া তাহারা শরণার্থীদের মধ্যে টাকা ঢালিতেছে। মুক্তি সংগ্রামে শরিক অঙ্গদলগুলির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য টাকা ঢালিতেছে। কোন কোন রাজনৈতিক দলের নাম দিয়া সুকৌশলে ছয় দফার পক্ষে গণভোট নেওয়ার জন্য গোপনে শরণার্থীদের মধ্যে প্রশ্নাবলী ছাপাইয়া বিলাইতেছে। ইহাদের উদ্দেশ্য যেন মুক্তিযুদ্ধে শরিক অঙ্গদলগুলি পরস্পরকে সন্দেহ করে। তারপর কাদা ছোড়াছুড়ি। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ। কিন্তু তাহাদের এইসব চালে দেশপ্রেমিক বাঙালীদের আর ভোলানো যাইবে না। একথা আজ পরিষ্কার করিয়া বলার সময় আসিয়াছে যে, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আমাদের মুক্তি সংগ্রামের চিরশত্রু। ইয়াহিয়ার জঙ্গীচক্রের হত্যাকাণ্ডে যে সব দেশ বড় বড় আদর্শের বুলি সত্ত্বেও নীরব থাকিয়াছে, সামান্য নিন্দা ভাষণে যাহাদের আপত্তি, পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য যাহারা মাথাব্যথার পরিচয় দেন তাহারাও আমাদের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে নহে। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের শক্ৰ তথাকথিত শরনার্থী বুদ্ধিজীবী যাহারা বাংলাদেশের এই দুঃসময়ের মিত্রদের উপর কটাক্ষ করিয়া টু পাইস কামাইতেছেন আর মুখে বলিতেছেন যে স্বাধীন বাংলাদেশ তাহদের কাম্য। এই সব ভণ্ড দেশপ্রেমিক সাম্রাজ্যবাদীদের দালালরা শশানের প্রান্তচর বাসী জীবদের মতই ঘূণ্য। দেশবাসীর উচিত ইহাদের চিনিয়া রাখা। মুক্তিসংগ্রামের ক্ষতি করা, ইহা একটি বালকেও বুঝে কিন্তু আমাদে তথাকথিত স্বাধীন বুদ্ধিজীবীরা উহা বুঝেন না এমন নহে। আজ সোভিয়েট ইউনিয়ন, বিশ্ব শান্তি পরিষদ, বিশ্ব ইউনিয়ন ফেডারেশন বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে সংগঠন করিতেছে। এই সব বুদ্ধিজীবীদের লেখায় তাহার স্বীকৃতি নাই।