পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

321 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড মাহমুদ আলীকে আমরা এতোকাল গণতন্ত্রী, প্রগতিশীল ও আত্মনিয়ন্ত্রণধিকারের প্রবক্তা বলেই বিশ্বাস করে এসেছি সেই মাহমুদ আলীর আসল রুপটা ও অমন বীভৎস-সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের তিনি এক নিকৃষ্টতম দালাল-সেটা আমরা আদৌ জানতাম না। বাঙালী জাতির জীবন-মরণ সংগ্রাম তাঁর প্রকৃত চেহারাটাকে বাংলাদেশের জনগণ তথা বিশ্বমানবের কাছে সহসাই তুলে ধরলো। পাকিস্তানের জন্মের দীর্ঘ ২৪ বছরের মধ্যে কোনো বাঙালীকে জাতিসংঘ পাকিস্তানী পতিনিধিদলের নেতারুপে পাঠানো হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই- মাহমুদ আলী তো দূরের কথা। এবারে বড় ফ্যাসাদে পড়ে পৃথিবীকে ধোঁকা দেবার জন্যই একটা পুতুলের প্রয়াজন হলো ইসলামাবাদের জল্লাদদের। আর সেই পুতুল নেতার ভূমিকায়ই ধরা দিয়েছেন মাহমুদ আলী। জাতির মুক্তিলাভের মহান সংগ্রামে যখন বৃদ্ধ জননেতা জীবনপণ করে কাজ করে যাচ্ছেন, তখনই মাহমুদ আলী গিয়েছেন জাতিসংঘে স্বজাতি ও নিজ দেশের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিম পাকিস্তানীদের দালাল হয়ে ওদের পক্ষে সাফাই গাইতে এবং স্বজাতির কুৎসারটনা করার জন্য বিশ্বরাষ্ট্র সভায়। মাহমুদ আলী জাতিসংঘে নিজেকে কৃর্ব বাংলার অধিকারী বলে জাহের করেছেন এবং সেটাই তো বর্তমান পরিস্থিতিতে তার আসল যোগ্যতা। তার দালালীসুলভ বক্তৃতায় বাংলাদেশর ঘটনাবলীর জন্য আওয়ামী লীগ, মুক্তিফৌজ ও ভারতকে দোষারোপ করে দুয়ার ধিকৃত খুনী ইয়াহিয়া ও টিক্কাদের পক্ষে যুক্তি খাড়া করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন তিনি। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি শ্রী সমর সেনও নিজেকে পূর্ব বাংলা সাবেক অদিবাসী বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খানের নরপশুসৈন্যবাহিনী কর্তৃক যে অকথ্য ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তার করুণ বর্ণনা দিয়েছেন। শ্রী সেন বর্তমানে শুধু ভারতের নাগরীক নন- বিশ্বসভায় ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধিও। কিন্তু মাহমুদ আলী বাংলাদেশেরই বাসিন্দা। বাংলাদেশ সম্পূর্ণ মুক্ত হলে মাহমুদ আলীর মতো পথভ্রষ্ট দালালদেরকে পাঞ্জাবীরা সংগে নিয়ে যাবে না। ছেড়া জুতোর মতো প্রয়োজন শেষে বাংলাদেশেই ফেলে যাবে- সে কথাটা আমাদের জানা নেই। তবে ইতিহাস যে মাহমুদ আলীদের ক্ষমা করবে না একথাটা আমরা দৃঢ়চিত্তেই বলতে পারি। মীরজাফর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাবীর লোভে সিরাজউদ্দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো, কিন্তু মাহমুদ আলী জীবনের মাত্র একটিবারই তুচ্ছ সাময়িকভাবে "নেতা বনা লোভের স্বাজাতি এবং নিজের অতীত জীবনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। ভারতের দালাল কমু্যনিষ্ট’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী বলে এই মাহমুদ আলীই কয়েকবার পাকিস্তানী কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আজ বাংলাদেশে মুক্তি সংগ্রামে চরম মুহুর্তে তার ভূমিকা সত্যিই অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এখন তিনি দেশদ্রোহীর ভূমিকা পালন করেছেন। তার অপমৃত্যু ঘটেছে। তাই আমাদের পরিচিত মাহমুদ আলীর অমন অপমৃত্যুর জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং ফ্যাসিষ্ট ডিক্টেটর ইয়াহিয়া খানের দালাল বর্তমান মাহমুদ আলীকে জানিয়ে রাখছিঃ আজ জেগেছে এই জনতা।”