পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

328 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সরকারের আশু কর্তব্য তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেও দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি সম্পর্কে তাদের মনে আস্থা সৃষ্টি করা এবং শত্রকে তাদের সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা। ইয়াহিয়া সরকার যেভাবে সর্বপ্রকার চেষ্টা চালিয়ে বাংলাদেশ থেকেই সমর্থন সংগ্রহের জন্য অপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকেও সেইভাবে তাদের কোণঠাসা করে রাখতে এবং প্রতিটি বাঙ্গালীকে স্বাধীন বাংলার পতাকার নীচে জমায়েত রাখার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে, কিংবা অবহেলাভরে একটিমাত্র মানুষকেও শত্রশিবিরে ফেলে দেওয়া এই পর্যায়ে আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে ইয়াহিয়া যেভাবে divide and rule-এর চেষ্টা চালাচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে এমনকি ইয়াহিয়া-সমর্থক বাঙালীদের মধ্যেও রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো দরকার। বাংলাদেশ আজ হোক কাল হোক স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পাবেই এ বিশ্বাস সবার মনে বদ্ধমূল করে দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ ইয়াহিয়ার শক্তির প্রথমে উৎস। এই উল্লাসে আঘাত হানার সুযোগ এখনো আছে। পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের কায়েমীস্বার্থের সিংহাসনে ফাটল ধরাবার নিরন্তর চেষ্টা চালাতে হবে। কোন ব্যর্থতাকেই ব্যর্থতা মনে করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনবোধ একটি বিশেষ দল গঠন করা যেতে পারে। আঞ্চলিক স্বার্থচেতনা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভু্যদয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অবলুপ্তির সম্ভাবনাজনিত ভীত্তিকেই বেশী করে কাজে লাগানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে পশ্চিম পাকিস্তানে জনমত খুবই বিভ্রান্ত। তবে এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবীর মুসলিম রাষ্ট্রগুলির দ্ব্যর্থহীন সমর্থনই সম্ভবত ঐক্যের মূল ভিত্তির কাজ করে চলেছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলির সমর্থনেই আজ পাকিস্তানের রাষ্ট্ৰীয় প্রতীক একান্তভাবেই ইয়াহিয়ার হস্তগত হয়েছে। দেশের বৃহত্তর অংশ হয়েও বাংলাদেশ সেই প্রতীকের উপর স্বীয় দাবী প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। মুসলিম দেশগুলি ইয়াহিয়াকে সমর্থন করছে কেন? কেউ কেউ এ নিয়ে বিশ্বের মুসলমান জনসাধারণ এবং তাদের ধর্মীয় চেতনার প্রতি কটাক্ষ করেই তৃপ্ত হয়েছেন। বিষয়টির গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করেননি। বস্তুত ইয়াহিয়া খাঁর প্রতি মুসলিম রাষ্ট্রযন্ত্রগুলির সমর্থনের মূল কারণ, এসব দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের অধিকাংশের অগণতান্ত্রিক ও ক্ষেত্রবিশেষে গণবিরোধী চরিত্র। তার চাইতেও বড় কথা পাকিস্তান সম্পর্কে এ সব দেশের জনসাধারণের, এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্রের সীমাহীন অজ্ঞতা। এসব দেশে পাকিস্তানী কূটনীতির সাফল্যও এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। মুসলিম দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান বৃহত্তম, যে হিসাবে এসব দেশে পাকিস্তানী কূটনীতিকর বরাবর বিশেষ মর্যাদা ভোগ করেছে। এসব কূটনীতিকরা পাকিস্তান সম্পর্কে বরাবরই একতরফা চিত্র তুলে ধরেছে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বাঙালীদের সংখ্যা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব, বাঙালীদের স্বকীয়তা, এসব সম্পকে এসব দেশের মানুষকে কিছুই জানতে দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই এসব দেশে একতরফাভাবে বাংলাদেশের অভু্যত্থানকে ভারতীয় চক্রান্ত হিসাবে দেখানো হয়েছে। তার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষ থেকে এসব দেশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়নি। ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের কথা বলায় কার্যত হিতে বিপরীত হয়েছে, এমন কি জয়প্রকাশ নারায়ণের মত সজ্জন ব্যক্তির সফরও এসব দেশে বিকৃত ছাপ ফেলেছে। তাতে করে কেবল বাংলাদেশ সমস্যা ভারতের সৃষ্টি- এ ধারণাকেই জোরদার করা হয়েছে। পাকিস্তানের পশ্চাতে মুসলিম দেশগুলির ঢালাও সমর্থনের অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করে এ ব্যাপারে আশু কর্তব্য নির্ধারণ অত্যান্ত জরুরী। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রায় ত্রিশটি দেশের শর্তহীন সমর্থন মোটেই বিচার করতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান। ইয়াহিয়ার নির্বিচার গণহত্যা, উৎপীড়নের শিকার হয়েছে এই