পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ স্বাধীনতাঃ ভিক্ষায়াং নৈব নৈবচ সাপ্তাহিক বাংলা ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা স্বাধীনতাঃ ভিক্ষায়াং নৈব নৈবচ এটা আজ অস্বীকার করে লাভ নেই, বৃহৎ শক্তিবর্গ বাংলাদেশ সমস্যার ব্যাপারে পাকিস্তানের উপর বিশেষ কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি, বা ইচ্ছে করেই করেননি। কোন দেশই আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। খুব কম রাষ্ট্রই বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন বলে খোলাখুলি মত প্রকাশ করেছে। সরকারীভাবে অনেকেই ভারতে চলে যাওয়া শরণার্থীদের সম্পর্কে গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করছেন, অনেক রাষ্ট্র সাহায্যও করেছে, কিন্তু প্রত্যেক ক্ষেত্রেই শরণার্থী সমস্যা ও বাংলাদেশ সমস্যা সম্বন্ধে বক্তব্যের ব্যাপারে বিরাট ব্যবধান লক্ষ করা গেছে। রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এক শক্তিশালী দল পাঠান হয়েছে। তারা সেখানে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য তুলে ধরবার চেষ্টা করবেন। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রসংঘের সদস্য নয়। উপরন্ত পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। অধিকন্তু পাকিস্তান এখনও দাবী করে ংলাদেশ পাকিস্তানেরই অঙ্গ এবং পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্র আজও পর্যন্ত তাই সরকারীভাবে বিশ্বাস করে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলকে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তদুপরি রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান অধিবেশনের সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার ডঃ আদম মালিক সরাসরি বলেছেন যে, বাংলাদেশ সমস্যা রাষ্ট্রসংঘে আলোচিত হোক তিনি তা চান না। সরকারীভাবে বক্তব্য বলার সুযোগ না পেলেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বেসরকারীভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ-আলোচনা চালাতে পারেন। কিন্তু তাতেও বিশেষ ফল হবে বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে গোষ্ঠী নিরপেক্ষ দেশগুলির মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে ভারতে বাংলাদেশ সমস্যা তুলেছিল। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না। পাকিস্তান বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন হলে সারা বিশ্বে ইসলাম বিপন্ন হয়ে পড়বে। তারা এখন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনে নিজেদের মত পাল্টাবেন বলে মনে হয় না। বৃহৎ শক্তিগুলোর ভূমিকায় বাংলাদেশ সরকারের আনন্দিত হওয়ার কিছুই নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে পাকিস্তান দু’ভাগ হয়ে গেলে যে টাকা সে পাকিস্তানকে ধার দিয়েছে তা ফেরৎ পাবে না। বরং পাকিস্তান যদি টিকে থাকে তবে পাক-ভারত সমস্যাও থাকবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় রাষ্ট্রেই অস্ত্র ব্যবসায় নানাভাবে আর্থিকদিক দিয়ে লাভবান হবে। তদুপরি তার ভয় বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তা দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার বিক্ষুব্ধ রাজনীতির শিকার হবে এবং ক্রমশ বামপন্থী রাস্তা ধরবে। তারচেয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হয়ে থাকলে সব সময় সেখানে একটা পশ্চিম পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব প্রবল থাকবে। যার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশর রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদীরাই সম্মুখভাগে থাকবে। চরম বামপন্থীরা কিছুতেই তাদের ঠেলে এগিয়ে আসতে পারবে না। এর ভিত্তিতে বিচার করলে বাংলাদেশ সরকারের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায় প্রায় অসম্ভব। চীনের ভয় আবার অন্য দিক থেকে। সে মনে করে বাংলাদেশ এখন স্বাধীন হলে জাতীয়তাবাদীদের ক্ষমতা চলে যাবে। বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাবে। তার চেয়ে যদি পাকিস্তান টিকে থাকে এবং চীন পাকিস্তান বন্ধুত্বের সুযোগ চীনপন্থীরা বাংলাদেশ সংগঠিত হবার সুযোগ পায় মন্দ কি? না হয়