পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

334 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ পাকিস্তানে নয় দাবানল ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশেই শরণার্থীরা ফিরবেন ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা পাকিস্তানে নয় বাংলাদেশেই শরণার্থীরা ফিরবেন (ভাষ্যকার) নির্বিচার গণহত্যায় যাদের হাত রক্তাক্ত হয়েছে তারা যদি মিথ্যের বেসাতি করেন- অপপ্রচারের আত্মতৃপ্তি নিয়ে তারা তৃপ্ত হতে পারেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত সাড়ে সাত কোটি বাঙালী তাতে মোটেও বিভ্রান্ত হইনা। ওরাও জানে এরা বিভ্রান্ত হবে না। হতে পারে না- তবুও অপপ্রচার চলছেই। এটাও নাকি নিয়ম খুনীর কণ্ঠ থেকেই নির্গত হয় সুন্দর শব্দ আর নিরাপদ আশ্রয়ের প্রলোভন। আজ আর বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হয় না এ কথাগুলো তার বর্বরতাকে নিন্দা করে উচ্চারিত হচ্ছে- ইতিহাসের সবচাইতে ঘৃণ্যতম খুনী ইয়াহিয়ার রক্তপিপাসু মুখাবয়ব আজ প্রতিটি ঘৃণিত শবদের পেছন থেকেই উকি দিয়ে ওঠে। সেই সব রক্তপিপাসু পাক বাহিণীর হাতে নিয়ন্ত্রিত ঢাকা বেতার থেকে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন যে অপপ্রচার অনুষ্ঠানই চলবে- এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া রেডিও পাকিস্তান এ কথা তো বারবারই স্বীকার করেছেন যে অবস্থা স্বাভাবিক। দীর্ঘ ছয় মাস ধরেই স্বাভাবিক কথাটি বারবার শুনতে শুনতে মনে হয়েছে, যেন পাকিস্তান গত ২৫শে মার্চের পর থেকেই কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে, এর আগেই যেন অস্বাভাবিক ছিল। যে অস্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে আমাদের আজন্ম সংগ্রাম। মাঝে মধ্যে যদি কখনও পাকিস্তান বেতার অনুষ্ঠান শুনেন তাহলে লক্ষ্য করবেন রেডিও পাকিস্তান কিছুটা নির্যাতিত শরণার্থীরা নদী পাহাড়-পর্বতের দুর্গম পথ অতিক্রম করে পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছেন। প্রত্যেক দিনই বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে যে ভারতে শরণার্থী হয়েছেন- রেডিও পাকিস্তান সেটা স্বীকার না করলেও আপাতত: অনেক শরণার্থী ফিরে গেছেন বলে পাকিস্তান রেডিও দাবী করেছে। যেহেতু রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব উথান্ট তার সাম্প্রতিক ভাষণেও বলেছেন যে, জেনারেল ইয়াহিয়ার আহবানে শরণার্থীরা কেউ ফিরে যায়নি। সুতরাং সাম্প্রতিকালে ফিরে যাবার সংখ্যা রেডিও পাকিস্তানের কল্যাণ ফুলে ফেপে দিনকে দিন বাড়ছেই। ফিরতে ফিরতে এতো বেশি যাচ্ছে যে ভারতে আশ্রয়প্রাপ্ত নব্বই লক্ষ সংখ্যাকেও অতিক্রম করে যাচ্ছে। প্রশ্ন আসে, এতো তো আসেনি, এতো ফিরছে কি করে? দুদিন আগেও পাকিস্তান বেতার থেকে অস্বীকার করা হয়েছিল বাঙালীদের দেশত্যাগের কথা - তারপর কিছুটা স্বীকার করে নিয়ে বলা হয়েছিল সামান্য কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী ভারতে পালিয়ে গেছে- কিন্তু একদিকে বিশ্বচাপ আর অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে একটা রাজনৈতিক সমাধানের আশা নিয়েই হয়ত পাকশাহী স্বীকার করে নিলেন শরণার্থী সমস্যা। এমনকি খুনী তার কণ্ঠস্বর পাল্টিয়ে সাদর আহবানও জানালেন- কিন্তু দিন দিন শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তেই থাকলো। ফলে অপপ্রচার ছাড়া পাকশাহীর আর কিছুই থাকলো না। তার পর এলেন অসামরিক গভর্ণর ডাঃ মালিক। তিনি ব্যাপক দেশত্যাগের কথা স্বীকার করলেন-দেশত্যাগীদের দেশে ফিরে গেলে জমি ঘর ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু কেউ ফিরলো না।