পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

335 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সম্প্রতি পাক বেতার থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে অন্যরকম- শরণার্থীদের মধ্যে ভারত-বিদ্বেশ ছড়ানো। পড়েছেন গুলি করে নাকি তাদের হত্যা করা হচ্ছে। অপপ্রচার শুনে শুনে এক একবার মনে হয় ওরা সত্যিই বলছে। মানুষ তার নিজের দেশে ফিরে যাবে নিজের ঘরে, নিজের ভিটেয় এই তো স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুদিন পরের জন্যে যা সত্য এই মুহুর্তের জন্যে তাই আমাদের স্বপ্ন। ফলে সত্য যা তা হলো এ রকম যে দলে দলে শরণার্থীরা একদিন ফিরে যাবেই। তবে পাকিস্তানে নয় বাংলাদেশে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। আর ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কেন, পৃথিবীর কোন বাহিনীর চোখকেই ফাঁকি দিয়ে নয়। ওরা বলেছেন, শরণার্থীরা দুর্গম পথ অতিক্রম করে তাদের জন্মভূমিতে ফিরে আসছে। ইয়াহিয়া সাহেব আপনি বলুনতো পৃথিবীর কোন দেশের স্বাধীনতার পথ এতো সুগম হয়েছিল? স্বাধীনতার পথই দুর্গম। এই পথই অতিক্রম করেই আমাদের ফিরতে হবে স্বাধীন বাংলার সোপানে। জেনারেল সাহেব, আজ বাঙালীদের কাছে সব চাইতে নির্মম ও ভয়াবহ যে শব্দ সেই শরণার্থী শব্দটির আপনিই তো নির্মাতা। ভারত শুধু বন্ধুর মতো এই একান্ত অনাথ শব্দটিকে আশ্রয় দিয়েছেন- ধৰ্ষিত, লুষ্ঠিত নিপীড়িত নব্বই লক্ষ মানুষের আপনার বর্বর সেনাবাহিনীর লোককে ফাঁকি দিয়ে ভারতে এসেও রক্ষা পায়নি, সীমান্তের ওপার থেকেও আপনার বাহিনীই শরণার্থী শিবিরগুলোকে লক্ষ করে নির্বিচারে গুলী চালিয়েছে। উদ্দেশ্য ভারতের সংগে যুদ্ধ বাধিয়ে বিশ্বের চোখ পাক-ভারতের যুদ্ধের দিকে ফিরিয়ে মুক্তি সংগ্রামকে বিভ্রান্ত করা। এই তো সেদিনও মেঘালয় সীমান্তবর্তী এক ক্যাম্প থেকে আমার নিজের ভাই চিঠি লিখে আপনার সেনাবাহিনীর কি নিষ্ঠুর হামলার বিবরণ পাঠিয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে শরণার্থী শিবির লক্ষ্য করে ছোড়া মেশিনগানের গুলীতে নিহত হয়েছে আট জন। এদের মধ্যে দুধের শিশু, উদাম যুবক-আপনার বর্বরতার হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছিল যারা আপনার বর্বরতা সেই অসীম সীমান্তকেও অতিক্রম করে তাদের হত্যা করতে উদ্যত। এই দোষ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাঁধে চাপিয়ে আমাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। আজ আমরা যুদ্ধের মধ্যে বদ্যভূমিতে একটা সত্যের চূড়ান্ত মীমাংসায় লিপ্ত- আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন অপপ্রচারে কিছুদিন মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়- এক একজনের খুনের অপরাধ সাময়িকভাবে চাপানো চলে অন্যের কাঁধেও কিন্তু চূড়ান্ত জয়ের জন্য চাই সত্য, সে সত্য আপনার নেই। আপনি বলুন সৈনিকের গুলীগুলো নিরপেক্ষ না হয়ে যদি কোন কথা বলতে পারতো? ২৫শে মার্চের পর থেকে আজ আদি নিহত দশ লক্ষাধিক মানুষের অমর আত্নার মধ্যে যদি খুনীর নাম লেখা থাকতো তাহলে আপনিই জেনারেল ইয়াহিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক প্রশাসক, আপনি কোথায় মুখ লুকোতেন?