পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

339 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ গণচীন ও বাংলাদেশের সংগ্রাম দাবানল ২৮ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ট সংখ্যা গণচীন ও বাংলাদেশের সংগ্রাম (দাবানল পর্যবেক্ষক) রাষ্ট্রসংঘে চীনের অন্তর্ভুক্তির ফলে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া স্বভাবতঃই উৎসাহব্যঞ্জক। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ চীনের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা পালনের জন্যে আশা প্রকাশ করেছেন। এছারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আদর্শেরই বিজয় সূচিত হয়েছে। উপস্থাপিত হয়েছে মহাচীনকে। আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামকে সমর্থন করার জন্য। আমরাও বাং জনগণের পক্ষ থেকে গণচীনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। পচিশে মার্চ তারিখ থেকে পাকিস্তানের ফ্যাসিবাদী চক্র বাংলাদেশের জনগণের উপর বর্বর আক্রমণ চালান। প্রতিরোধ করার পর থেকে ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করবে এবং তার জন্যে বাংলাদেশে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়েছে এই বলে জঙ্গীচক্র চীৎকার করতে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণচীন পাকিস্তানকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। সরাসরিভাবে গণচচীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা না করলেও, বিদেশী আক্রমণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষাকল্পে আমরা পাকিস্তানের পাশে থাকবোচীনের এই বক্তব্য বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভারত পাকিস্তান বিবাদ প্রতীয়মান করতে পাকিস্তানী উদ্যোগকে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশে সামরিক জান্তার উৎপীড়ন ও ব্যাপক গণহত্যায় যখন ডানপন্থী ও বামপন্থী উভয়েই বিপন্ন, এই ব্যাপক অত্যাচার, হত্যা লুণ্ঠন যখন বিশ্ববিবেককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল দেশে দেশে ধিক্কার উঠেছিল জঙ্গশাহীর বিরুদ্ধে তখন একটি বিশেষ মতাদর্শে পীঠস্থান এবং এশিয়ার সর্ববৃহৎ শক্তি গণচীণের মৌনতা তারই অনুসৃত আদর্শের ব্যতিক্রম। গণচীণ, লাওস, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েৎনাম, প্যালেষ্টাইনের মুক্তিযুদ্ধের সর্বান্তকরণে সমর্থন করে যাচ্ছে এবং যুদ্ধাস্ত্র থেকে শুরু করে সবরকম প্রয়োজনীয় সাহায্য করে যাচ্ছে। অথচ সেই জনগণতান্ত্রিক চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি সমর্থন করছে না। পৃথিবীর অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশেও এর প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত। এমনকি চীন অনুসৃত আদর্শে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক শিবিরে চীনের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে মতভেদ দেখা দেয় এবং ক্রমশঃ প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে। গণচীনও এই প্রতিক্রিয়ার সাথে সম্পূর্ণ অবহিত। সেই কারণেই বোধ করি গণচীনও বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সঠিক তাৎপর্যকে উপলদ্ধি করতে চেষ্টা করেছে। এরই সুস্পট ইঙ্গিত প্রতিভাত হয় গত ৭ই নভেম্বর ভুট্টোর নেতৃত্বে পাক-সামরিক সর্দারদের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় ভারপ্রাপ্ত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশে ন্যায়সঙ্গত সমাধানের জন্য পাকিস্তানকে উদ্যেগী হতে আহবানের মধ্য দিয়া। এই আহবানে বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনা নীতির নবমূল্যায়নের স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। সঙ্গে সঙ্গে চীনা মন্ত্রী এ অভিযোগও রেখেছেন, ভারত পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে।