পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

350 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংগ্রামী বাংলা ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশে ঈদ হয় নাই যে উৎসব, যে আনন্দ, যে মহামিলনের বার্তা নিয়ে প্রতি বছর ঈদের আবির্ভাব মানুষের ঘরে, সে বার্তা অশ্রুসজল নয়নে ফিরে চলে গেছে। বাংলার ঘরে ঘরে বিষাদের ছায়া, প্রতি ঘরে কান্নার রোল, প্রতিটি মানুষের চোখের জলে এবারের ঈদ বেদনাহত হয়ে ফিরে গেছে। ঈদ উৎসবের ভাষা স্তব্ধ । আনন্দের ভাষা কণ্ঠরুদ্ধ। মহামিলনের বদলে মহাবেদনা নিয়ে ফিরে গেছে সবাই নিজ নিজ আশ্রয়ে। এবার আবার কিসের ঈদ? সমগ্র বাংলা জুড়ে নর কঙ্কালের মিছিল। শুকুনী গৃহিনীর রাজত্ব। এখানে পুত্রহারা মায়ের আকুল আর্তনাদ। মাতৃহারা শিশুর মর্মভেদী হাহাকার। গৃহহারা, সম্পদহারা, সর্বহারাদের দীর্ঘশ্বাসে আকাশ বাতাস ব্যথিত। বাংলার প্রকৃতি বেদনায় ক্ষত বিক্ষত। মানুষ লড়াই করছে মৃত্যুর সঙ্গে, দারিদ্রের সঙ্গে, নিষ্ঠুর পাক ফৌজ ও তার অনুচরদের সঙ্গে। শুধু ঈদ নয় বাংলায় শরৎও এসেছিল কিন্তু শারদীয় উৎসব হয় নাই। আনন্দ হয় নাই। জগজ্জননী দুর্গা বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িতা লাঞ্ছিতা হয়েছেন। বাংলায় মন্দিরও নেই দেবতাও নেই। আজ বাংলায় গৃহবধূ সান্ধ্যদ্বীপ জুলে না বিগ্রহ দেবতাকে প্ৰণাম জানাবার কেউ নাই আজ বাংলায় বাংলায় উলধ্বনি আর হয় না, কাষার ঘন্টাও বাজে না। মন্দিরের দ্বারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য কোন ভক্ত পূজারী পাক অধিকৃত বাংলায় নাই। বাংলায় ফুল হয়ত আছে তার সৌন্দৰ্য উপভোগ করার কোন লোক নাই। বাঙ্গালী বাড়ীঘর চাকরী ব্যবসা সব ছেড়ে সর্বহারায় পরিণত হয়েছে, লাঞ্ছিত মানবতা কেঁদে ফিরে সর্বত্র। বাংলার সুখ শান্তি নির্মমভাবে নিহত। বাংলায় আছে পাক ফৌজের পাশবিক অত্যাচার আর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের রাইফেল মেশিনগানের গোলাগুলি। আজ বাংলাদেশ এক বিশাল রণক্ষেত্র। ৭ মাস ধরে বাংলার মানুসে রাতে ঘুমুতে পারে নাই। আহারের কোন প্রেরণা পায় নাই। বাংলার চাষীরা মেঠো গান ভুলে গেছে। রাখালেরা আর মাঠে মাঠে বাঁশী বাজায় না। শিশুদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝিদের ভাটিয়ালী গানে নদী মাতৃক বাংলা আর মুখরিত হয়ে উঠে না। যাত্রা থিয়েটার বাংলা থেকে বিদায় নিয়েছে। পল্লীগীতি, লোকগীতি, বাউল, মুর্শিদী কীর্তনের জন্মভূমি বাংলা আজ প্রতিহিংসাপরায়ণ। অত্যাচারী জালেমশাহীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সৈনিক। বাংলায় লুন্ঠনকারী আর ডাকাতেরা বড়লোক হয়েছে, লক্ষপতি হয়েছে, আবার অনেক ধনী পথের কাঙ্গাল হয়েছে। নির্বিচারে নিরাপরাধ জনতাকে হত্যা করা হয়েছে, আর অপরাধীরা রাজাকার হয়েছে। এখনও বাংলায় গঙ্গা, যমুনা, ব্ৰক্ষ্মপুত্র, মেঘনা ধলেশ্বরী, তিস্তা প্রবাহিত হয় কিন্তু তার পানি লাল। বাংলার শ্রমিকেরা দোকানদার দোকান ছেড়েছে। বাংলা আজ মুক্তিযোদ্ধা।