বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ শত্রুপরিত্যাক্ত ভালুকা জাগ্রত বাংলা ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা শক্ৰপরিত্যাক্ত ভালুকা বাংকার, বাংকার, শুধুই বাংকার। যেদিকে তাকানো যায়, চোখে একটা না একটা বাংকার পড়বেই। ভালকার কুলাঙ্গার চান মিয়ার বাড়ীর উঠোনে তেমনি একটা বাংকার চোখে পড়লো। এতো চমৎকারভাবে তৈরী এ বাংকারটি যে, দিনের পর দিন এতে আশ্রয় নিয়ে থাকলেও বিপদের এতোটুকু সম্ভাবনা নেই। বাড়ীটির পশ্চিমদিকেও চারখানা বড় বড় বাংকার। এ সবের মধ্যে থাকা খাওয়া সবকিছুই চলতে পারে। এ থেকে বেরিয়ে নিরাপদে পালাবার পথও তৈরী রয়েছে। এক কথায় বাড়ীটি এতো সুরক্ষিত যে, একে একটা দূর্গ বলা চলে; ছাদের উপরও বাংকারের অস্তিত্ব তারই প্রমাণ। বাড়ীটি থেকে বেরুলেই সামনে নদী। খেয়াঘাটের উপর রাস্তার মুখে বাংকার। দূর থেকে বুঝা যায় না ওখানে কোন শত্রু ঘাঁটি আছে কিনা। আর একটু পেরিয়েই কিছু বেড়ার ঘর, যেখানে রাজাকাররা থাকতো তাদের পরিবার নিয়ে। পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর, সাবরেজিষ্ট্রার অফিস এ সমস্ত ঘরগুলোও একই কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ওখানে পড়ে রয়েছে চাল, ডাল, মরিচ। কোন জায়গায় পড়ে আছে রান্না করা খাবার, খেয়ে নেবার সময়টুকুও পায়নি-পালাতে হয়েছে পাক সেনাদের পা-চাটা পোষা কুকুরের মত। বাজারের পশ্চিম অংশে বহু বাংকার আর শেল্টার। দক্ষিণে ঈদগাহ মাঠটিও বিরাট বাংকারে পরিপূর্ণ। মসজিদের দক্ষিণ পাশে দুখানা বাংকার জোড়া লাগানো; এক একটাতে গোটা পরিবার নিয়ে বাস করা যেতে পারে। বাজারের পর থানা। থানার পশ্চিম দিকে সুউচ্চ মাটির বাঁধ, বাঁধের আড়ালে বাংকার। মাত্র কদিন পূর্বেই একটি দালান তৈরী হয়েছে দশ ইঞ্চি পুরু দেয়ালে; পশ্চিমের দেয়ালটায় গুলি করার জন্যে ফোঁকরা রাখা হয়েছে। শুধু থানাটিকে ঘিরেই পশ্চিমে বড় বড় ১০ খানা, দক্ষিণে ৭টা, পূর্বেও ১০ খানা ও উত্তরে ৪টি বাংকার। থানা এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে মাটির নিচে একটি ঘর। ঘরটিতে চেয়ার, টেবিল, তক্তপোষ সবই পাতা রয়েছে শোনা গেল পাক হানাদারেরা ওখান থেকে ওয়ারলেসে খবর পাঠাত। একটা ব্যাপার খুব অবাক হবার মত-পালিয়ে যাবার পূর্ব মুহুর্তে ওরা প্রতিটি অফিসের কাজগপত্রগুলো নষ্ট করে দিয়ে গেছে। থানার অফিস কক্ষেও একই কাণ্ড, কাগজপত্র নষ্ট অবস্থায় ইতস্ততঃ ছড়ানো। থানার পূর্ব পাশ দিয়ে হাইওয়ে। গোটা হাইওয়েটাই বাংকার ও ট্রেন্সে একাকার। এসব দেখে স্বভাবতঃই মনে ভয় জাগে, নিরাপত্তার এতো সুন্দর বন্দোবস্ত থাকা সত্বেও শত্ররা পালিয়ে গেলো কেন? মেজর আফসারের কাছে এ প্রশ্নের জবাব মিললো। তিনি বললেন, এক মাস যাবৎ আমরা তাদের এমনভাবে অবরোধ করেছিলাম যে, তাদের খাদ্য, পানীয় এবং সকল রকম সরবরাহের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক-সামরিক পট পরিবর্তনের সামনে ওরা দিশেহারা হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। শত্রর তৈরী একটা বাংকারে বসে বিষয়টি লেখা চলছিলো। ভালুকা থানার রেভিনিউ সার্কেল অফিসার বললেন, পাক সেনারা ভালুকায় আসার দুদিন পর আমাকে জোর করে ধরে এখানে আনা হয়। এরপর এখানে যা দেখেছি তা প্রকাশ করতে সংকোচ লাগে। চান মিয়ার সুযোগ্য পুত্র ধনু মিয়া এখানে না থাকলে এঅঞ্চল এতোটা ধ্বংস্তুপে পরিণত হতো না। ধনু ও তার সঙ্গীরা একদিন ১৯ জন নারীর ওপর পাশবিক উৎপীড়ন চালায়।
পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪০৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।