পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

376 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ জনমত জাগ্রত বাংলা ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৯ম সংখ্যা জনমত অগ্রদূত ধমকাচ্ছিলেন। যাঁকে ধমকানো হচ্চিল তিনি নাকি সেন্ট্রির দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারেননি। ঘটনা সামান্য। কিন্তু সামান্য ঘটনার সম্বন্ধেই জন্ম নেয় বৃহৎ ঘটনা। আজকের স্বাধীনতা সংগ্রাম এমনি সব সমন্বয় ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্রোহ সংগ্রাম ব্যাপারটাও সামান্য কিছু ঘটনারই সমাবেশ-পোষ্টার বক্তৃতা একটা বুলেট, ছোট এ কথা না বোজার পিছনে ‘পজিশন ট্রিগার সামান্য চাপ-এ করেই সম্ভব। চলেছে বিরাট এক পরিবর্তন, সাড়ে সাত কোটি মানুষের চূড়ান্ত মুক্তি। কাজেই সামান্য এবং সাধারণ ঘটনাগুলোকে উড়িয়ে মুক্তিবাহিনীতে যে কোন সেনাবাহিনীর মতই যোগ্যতা অনুযায়ী পদ কিংবা পদবী থাকবে এইটেই স্বাভাবিক। কিন্তু সাধারণ সেনাবাহিনীর চেয়ে মুক্তিবাহিনীর গঠন আলাদা। তরুণরা এখানে নেহায়েত চাকুরীর জন্যে আসেনি। তবু ইয়াহিয়ার সৈন্যের মতো ভাড়ার সৈন্য নয়; তাদের অনুপ্রেরণার মূলে রয়েছে দেশাত্মবোধ। সুতরাং এখানে উচ্চপদস্থকে কর্কশ স্বরে ধমকাচ্ছে-এই যে একটা অগণতান্ত্রিক দৃশ্য, এটা একবারেই খাপ খায় না। বাংলাদেশের অর্থ পাকিস্তান থেকে আলাদা একখণ্ড জমি নয়, পাকিস্তানী আমলের কলুষিত ভাবধারা থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত হবার জন্যেই বাংলাদেশ অগণতান্ত্রিক দেশের সামরিক আচরণগুলোও অগণতান্ত্রিক আমলাসুলভ। আপনি হয়ত কারো সাথে প্রয়োজনীয় কাজে দেখা করতে চাইলেনতিনি আপনাকে সহজেই দেখা দিতে পারেন, কিন্তু আপনাকে প্রপার চ্যানেল’ নামের একটা ব্যুহ পেরিয়ে আসতে হবে। মানুষে মানুষে এই যে কৃত্রিম দূরত্ব, এটা কোনমতেই স্বাধীন দেশের রীতি হতে পারে না; সমাজতান্ত্রিক দেশের তো নয়ই। ধরা যাক সেই সেন্ট্রিটা কর্তব্য পালনে ভুল করেছিল। বাঙালী জাতির ইতিহাসে এতো স্বল্প সময়ের ফৌজী জীবনে ভুল না হওয়াই বরং অস্বাভাবিক। সেজন্যেই একজন বুদ্ধিমান যোদ্ধা তার সহযোদ্ধাকে ধমক দিয়ে অপ্রস্তুত করে দেবে না, কিংবা তাকে খুব চড়া গলায় শাসিয়ে দিয়ে মজা পেতে চাইবে না, বরং তার ত্রটিগুলো ঠাণ্ডা মাথায় শুধরে দিতে প্রয়াস পাবে। যেমন, এদিকে এসো, তোমাকে দেখিয়ে দিই কী করে সেন্ট্রি দিতে হয়। এই যে আমি রাইফেল নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াচ্ছি, তুমি ওদিক থেকে আসতে থাকো-হল্ট। ঠিক আছে? লোকটা একটু দূরে থাকতেই হল্ট’ বলবে। বেশী কাছে এসে গেলে যদি ওর সাথে মারাত্মক অসুখ থাকে তবে কী দশাটা হবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। এইটেই সবচেয়ে সুন্দর ও কার্যকরী পন্থা; কারণ এরপর তার আর ভুল হতে পারে না। এবং যা কিছু সুন্দর, তাই গণতান্ত্রিক। মানুষের পারস্পারিক আচার-ব্যবহারের মধ্যে সামরিক অসামরিক বলে কিছু নেই। সেনা বিভাগ গোটা সমাজের একটি অংশ। কৃষি, শিল্প, পরিবহন ইত্যাদি বিভাগ যেমন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সমাজের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে সেনাবিভাগের বেলায়ও তাই। কিন্তু এটা অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে অনেক সময় বেশী গুরুত্বপূর্ণ এজন্যেই যে, যখন কোন পশুশক্তির আবির্ভাব ঘটে, তখন তা বল প্রয়োগে বিচ্ছেদ করার জন্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া পথ থাকে না। এবং ঠিক এজন্যেই সৈনিককে হতে হয় সবরকম অসুন্দর ও অন্যায়বিরোধী মানুষ। সবচেয়ে গনতান্ত্রিক মানুষ।